‘ফোন কেড়ে নেওয়ায়’ আত্মহত্যা কিশোরীর

ঝুলন্ত মরদেহ
প্রতীকী ছবি

সুযোগ পেলেই স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত মিনা (১৫)। পরিবারের সদস্যরা জানান, টিকটক ভিডিও করা ও দেখা ছিল তার পছন্দ। এ ছাড়া ফেসবুক ও ইউটিউবেও লম্বা সময় কাটাত সে। মুঠোফোন আসক্তির কারণে মিনা পড়াশোনায় ও ঘরের কাজে মনোযোগ হারায়। এ কারণে মাসখানেক আগে একবার তার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় মিনা। সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও এবার আর প্রাণ রক্ষা হয়নি। গতকাল শনিবার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার এক ঘণ্টা পর নিজ ঘরের বৈদ্যুতিক পাখায় মিনার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

মিনা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিরাজ মিয়ার মেয়ে। চার বোনের মধ্যে মিনা তৃতীয়।

পরিবারের সদস্যদের ধারণা, মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ায় মিনা আত্মহত্যা করেছে। গতকাল রাত ১১টায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশটি পাঠানো হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েক বছর আগ থেকে মিনার মুঠোফোন আসক্তি শুরু হয়। তখন সে পরিবারের অন্য সদস্যদের মুঠোফোন ব্যবহার করত। মুঠোফোন আসক্তির কারণে নবম শ্রেণির পর মিনার পড়াশোনা আর এগোয়নি। মেয়ের চাপাচাপিতে এক বছর আগে তাকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়া হয়। এরপর আসক্তি আরও বাড়ে। মাসখানেক আগে মিনার বড় বোন মুঠোফোন কেড়ে নেন। ওই দিন সে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরিবারের সদস্যরা দেখে ফেলায় ওই যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পায় সে। গতকাল দুপুরে মা মিনাকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করতে বলেন। কিন্তু সে ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। মা তখন রাগ করে ফোন কেড়ে নেন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে নিজ ঘরের বৈদ্যুতিক পাখায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

মিনার বড় বোন নুসরাত জাহান বলেন, ‘মিনা মুঠোফোন ছাড়া কিছু বুঝত না। কোনোভাবেই এই আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে পারছিলাম না। অনেক কাউন্সেলিং করেছি। লাভ হয়নি। গতকাল এই নিয়ে কথা বলার পর চরম খেসারত দিতে হয়েছে।’

বাবা মিরাজ মিয়া বলেন, ‘এক মাস আগে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পর সাবধান হয়ে গিয়েছিলাম। এই ফোন আমার মেয়ের জীবন কাইড়া নিল।’

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, পরিবারের লোকজন তাঁকে জানিয়েছেন, মেয়েটির মুঠোফোন আসক্তি ছিল। মুঠোফোন ধরতে না দেওয়ার পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।