অসুস্থ বৃদ্ধাকে পথে ফেলে যান বাড়িওয়ালা, ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে
জ্বরে কাঁপছিলেন বৃদ্ধা। বাড়িভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা তাঁকে ফেলে রেখে যান পথের ধারে। তাঁর শরীবের এক পাশ পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত। কনকনে শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে গতকাল রোববার রাতে স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী তাঁকে উদ্ধার করে পাশের কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
৬০ বছরের কাছাকাছি ওই বৃদ্ধার নাম রেহানা বেওয়া। থাকতেন নীলফামারী সৈয়দপুর শহরের বাঁশাবাড়ি মহল্লার ভাড়াবাড়িতে। অনেক আগেই স্বামী মারা গেছে তাঁর। এরপর থাকতেন একমাত্র ছেলের সঙ্গে। ২০২২ সালে ছেলেও মারা যায়। এ অবস্থায় পুত্রবধূর সঙ্গে বাঁশবাড়ি মহল্লার ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। এক বছরের মাথায় পুত্রবধূ অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। একা হয়ে যান বৃদ্ধা রেহানা।
এদিকে প্রায় এক বছরের বাড়িভাড়া বকেয়া পড়ে রেহানা বেওয়ার। ছেলের বউ মাঝেমধ্যে কিছু টাকা পাঠাতেন। সেই টাকায় কোনো রকমে চলতেন তিনি। কিন্তু বাড়িভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না।
এমন অবস্থায় বাড়ির মালিক খড়ি ব্যবসায়ী আলিমুদ্দিন গতকাল রোববার সকালে রেহানাকে বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে কামারপুকুরের ডাঙ্গাপাড়ার রাস্তার পাশে ফেলে আসেন। সেখানে সারা দিন পড়েছিলেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কথা বলছিলেন।
এ বিষয়ে রাতে খবর পান সৈয়দপুরের স্বেচ্ছাসেবী নওশাদ আনছারী (৩০)। তিনি কামারপুকুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবী খোরশেদ আলম ও রাশেলের সহযোগিতা নিয়ে বৃদ্ধার খাবারের ব্যবস্থা করেন এবং নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক সাজেদুর রহমানকে খবর দেন।
নওশাদ আনছারী বলেন, ‘শীতে একজন বৃদ্ধা কষ্ট পাচ্ছেন খবর পেয়ে আমরা কীভাবে তাঁকে সহযোগিতা করতে পারি, তা নিয়ে ভাবতে থাকি। পরে কিশোরগঞ্জের নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমকে খবর দিলে গভীর রাতে মাইক্রোবাস নিয়ে এসে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে যান।’
নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘একজন বৃদ্ধা পথে পড়ে থাকবেন, এটা হতে পারে না। আমরা মানবিক কারণে বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে এসেছি। এখন থেকে তিনি বৃদ্ধাশ্রমে থাকবেন। আমরা তাঁকে মায়ের মতো দেখতে চাই।’
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী আলিমুদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। ফলে তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।