টিউশনি করে পড়াশোনা চলেছে মাকসুদার, মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা
মিজানুর রহমান ও আরিফা আক্তার দম্পতির তিন মেয়ে। তাঁদের মধ্যে বড় মেয়ে মাকসুদা আল বারী ওরফে মিম চলতি বছর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফলে মেধাতালিকায় ৩ হাজার ৩১১তম হয়ে সুযোগ এসেছে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে পড়ার। তবে সেখানে ভর্তি ও পড়াশোনার সার্বিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।
মাকসুদা সপরিবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে থাকেন। সেখানেই তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এ দুশ্চিন্তার কারণ।
আলাপের এক পর্যায়ে মাকসুদার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, তিনি মেয়েদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন না। তিন বোনের মধ্যে মাকসুদা ও আরেক মেয়ে টিউশনি করে সবার পড়ার খরচ জোগাড় করেন। এখন মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন মাকসুদা। তাঁকে কীভাবে সেখানে ভর্তি করাবেন ও পড়ার খরচ দেবেন, এসব চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছেন না।
মাকসুদার বাবা কখনো রাজমিস্ত্রি, কখনো কৃষিকাজ করেন। ৮ শতকের বসতভিটা আর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১১ শতাংশ জমি—নিজের স্থাবর সম্পত্তি বলতে এটুকুই। একটি দুধেল গাইসহ বাছুর আছে। এটির দুধ বিক্রি করে ও বর্গা নেওয়া দুই বিঘা জমিতে আবাদ করে টেনেটুনে সংসার চালান মিজানুর ও আরিফা দম্পতি। মাকসুদার ছোট বোন মারিয়াতুন আল বারী ওরফে মেঘনা লালমনিরহাট শহরের মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। আর ছোট বোন মাহমুদা আল বারী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।
মাকসুদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির কাজে মাকে সাহায্য করছেন মাকসুদা। এ সময় গ্রামের কয়েকজন মাকসুদাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য আসেন। তাঁদের মধ্যে আবদুস সামাদ নামের একজন নিজেকে মাকসুদার চাচা দাবি করে বলেন, ‘মিম যে ভালো করবে, সেই বিশ্বাস আমাদের ছিল। কিন্তু অভাবের সংসার থেকে মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, সে চিন্তাই সবার।’
আবদুস সামাদের কথার রেশ ধরে নিজের সংগ্রামী জীবনের কথা শোনালেন মাকসুদার বাবা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চট্টগ্রামে গিয়ে কাজ করেছেন। তিনি রাজমিস্ত্রি আর তাঁর স্ত্রী আরিফা গার্মেন্টসে কাজ করতেন। এসব কাজের মাধ্যমে কিছু অর্থ সঞ্চয় করে পৈতৃক ভিটায় একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই করেন। তবে এখনো বাড়ির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আপাতত কোনো সঞ্চয় নেই; দুই বিঘা জমি বর্গা নেওয়া হয়েছে, সেখানে যে আবাদ হয়, তার অর্ধেক অংশ ভাগে পান। আর আছে একটি দুধেল গাই। এসব দিয়েই সংসারের খরচ সামলাতে হয়।
২০২২ সালে লালমনিরহাট সদরের মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২৪ সালে একই ইউনিয়নের দুড়ারকুঠি বেগম কামরুননেছা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাকসুদা। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকেরা তাঁর কাছে বেতন ও টিউশন ফি নিতেন না। এর পাশাপাশি নবম শ্রেণির ছাত্রী থাকার সময় থেকেই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অঙ্ক, ইংরেজিসহ বিজ্ঞান বিষয়ে টিউশনি করিয়েছেন বলে জানালেন মাকসুদা।