গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ শোঁ শোঁ শব্দে জলোচ্ছ্বাস ধেয়ে আসে। বাঁধ উপচে ঘরের মধ্যে ঢুকে যায় পানি। আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে পা বাড়াতেই ভেসে যায় ঘরের সবকিছু। ভোররাতে বাড়ি ফিরে বাসিন্দারা দেখেন, ঘরের খাবার, হাঁস-মুরগির খোপ সব ভেসে গেছে। দুই দিন (মঙ্গল ও বুধবার) ধরে ঘরে রান্না নেই। কেউ কোনো সাহায্য–সহযোগিতা করেনি। ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজ্ঞানের বিবি মরিয়মের (৪৩) কথায় এমনটাই ওঠে এল।
সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে মনপুরা উপজেলার শহররক্ষা বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে। আজ বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, এখনো অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। জোয়ারের ঝাপটায় শত শত ঘরের ভিটি, ঘরের বেড়া ভেসে গেছে। অনেক গাছ উপড়ে গেছে। পুকুরগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ধানের গাছ শুয়ে পড়েছে। ঘরের খুঁটি আর চাল না দেখলে বোঝা যায় না, এখানে কোনো ঘর ছিল।
চরজ্ঞানের আনোয়ারা বেগম, সালাউদ্দিন ও শাহাবুদ্দিন তিনজনের ঘর পানিতে ডুবে আছে। জোয়ারের উচ্চতা কমেছে, তাই প্লাবিত হচ্ছে না। কিন্তু পানি নামেনি। কাদাপানি ভেঙে চলাফেরা করতে হচ্ছে। আনোয়ারা বলেন, তাঁর ২টি গরু, ১২টি মুরগি ও ১৫টি হাঁস মারা গেছে। অনেক কষ্টে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি। কোনো সাহায্যে পাননি এখনো।
দুই দিন পর আজ রান্নার আয়োজন করেছেন হাজিরহাট ইউনিয়নের চর যতিন গ্রামের হাওলাদার বাড়ির আয়েশা বেগম (৪৯)। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খেয়েছেন। এই বাড়ির ১২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারও ঘরের ভিটি নেই। তাঁরা চুলার অভাবে রান্না করতে পারেননি। বাড়ির বাসিন্দা নুরনবী হাওলাদার, সাইফুল ইসলাম মাঝি, আবুল কালাম মাঝি, নিরব হাওলাদার, সুমন মাঝি, ইলিয়াস, শাহে আলম, আবুল কালাম ও আলাউদ্দিনের অভিযোগ, সরকার থেকে কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রেও কোনো খাবার পাননি তাঁরা।
একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম মাঝি বলেন, ২২ দিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এই সময়ে এমনিতেই অভাবে সংসার চলে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত। তাঁর পুকুরের দেড় লাখ টাকার পাঙাশ, ৬টি ছাগল, ১০ থেকে ১২টি হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। কিন্তু কোনো জায়গা থেকে তিনি কোনো সাহায্য পাননি।
চর যতিন গ্রামের মতু মাঝি বাড়ি, নুর মোহাম্মদ বাড়ি, সামসু পিয়ন, মো. রাকিব, মো. ফিরোজ, রতন ফরাজি, নুরুদ্দিন অরাজির পরিবারসহ কয়েক শ পরিবারে এখনো চুলা জ্বলেনি। তাই তাঁদের রান্না খাবার দেওয়া দরকার বলে দাবি জানান। কিন্তু আজকে পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে।
মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সচিব বলেন, তাঁর ইউনিয়নের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৩ টন চাল পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল।
মনপুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিস কুমার বলেন, তাঁরা ১২ টন চাল পেয়েছেন। চারটি ইউনিয়নে সমানভাবে ভাগ করে দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের চেয়ে বরাদ্দ কম। জেলা প্রশাসনের কাছে আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পেলে বিতরণ করা হবে।