বাঁধ খুলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তির ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ডম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টির প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাতে রাজশাহী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়। মিছিলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনের জোহা চত্বরে এসে মিলিত হয়। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে নগরের তালাইমারি মোড়ে যায়। সেখানে রাত ১টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার নদীর অধিকার, ফিরিয়ে দাও দিতে হবে’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘আমার দেশ ডুবল কেন, জবাব দে, জবাব দে’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘তুমি কে আমি কে, আবরার আবরার’, ‘কে মেরেছে কে মেরেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম (কনক)। তিনি এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘বর্ষার সময় তারা বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের ডুবিয়ে মারে। এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। আমরা এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বাংলাদেশের নদীর পানির অধিকার রক্ষা করতে প্রয়োজনে ‘লংমার্চ টু ফারাক্কা বাঁধ’ কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব।
এদিকে একই দাবিতে গতকাল রাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক, গোলচত্বর ও ছাত্রী হল প্রদক্ষিণ করে আবার গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আজকের এই দিনে, আবরার তোমায় পড়ে মনে’, ‘বন্যায় যখন মানুষ মরে, আবরার তোমায় মনে পড়ে’, ‘যদি চাও মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছরের দুঃশাসন আর নতজানু মনোভাব আমাদের ভারতের কাছে গোলাম করে রেখেছে। ভারতের আধিপত্যের কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন জনতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকার ভারতীয় তাঁবেদারদের নয়। আমরা আশা করি, ভারত আগামীতে এমন ঘটনা ঘটাতে এক শ বার ভাববে।’
আরেক সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘ভারত যদি এ দেশের মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, তাহলে এ দেশের মানুষ সেটা কখনোই মেনে নেবে না। আমাদের রক্ত এখন কারো দালালি করতে বলে না, আমাদের রক্ত এখন যুদ্ধ চায়।’
গতকাল রাত একটার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হল ও আশপাশের মেস থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হন। এরপর ক্যাম্পাস ও পরে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ‘ঢাকা না দিল্লি, ঢাকা, ঢাকা’, ‘ভারতের আগ্রাসন, ভেঙে দাও জনগণ’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সমাবেশ করেন। এ সময় তাঁরা ভারতের দ্বিমুখী নীতির প্রতিবাদ জানান। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ‘বন্ধুত্ব হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে, অবশ্যই প্রভুত্বের ভিত্তিতে নয়। আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দেওয়া চলবে না। এটা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা ভারতের কৃত্রিমভাবে তৈরি করা বন্যা। আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, ছাত্র–জনতা এই বর্বরতা রুখে দেবে।’