পোষ্য কোটার প্রতীকী ‘কবর’ ইট দিয়ে বাঁধাই করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

পোষ্য কোটার ‘কবর’ ইট দিয়ে বাঁধাই করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকালেছবি: প্রথম আলো

স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটা বাতিল করতে নানা কর্মসূচি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে পোষ্য কোটাকে প্রতীকী ‘কবর’ দিয়ে গতকাল সোমবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা পোষ্য কোটার সেই ‘কবর’ ইট দিয়ে বাঁধাই করেছেন। ১৯৭৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা চালু হওয়ায় ৭৭টি ইট দিয়ে সেই ‘কবর’ পাকা করা হয়েছে।

গতকাল রাতে পোষ্য কোটার প্রতীকী ‘কবর’টি পাকা করা হয়। পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।

‘কবর’ পাকা করার সময় গতকাল রাতে সালাউদ্দিন আম্মার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম অযৌক্তিক পোষ্য কোটার সমাধিস্থল সিনেট ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের মাঝবরাবর আমরা রেখেছি। সমাধিতে আমরা ৭৭টি ইট দিয়েছি, যেহেতু ১৯৭৭ সালে এই ঘৃণিত ও অযৌক্তিক একটি কোটা চালু করেছিলেন আবদুল বারী (তৎকালীন উপাচার্য), তাঁর সন্তানকে পোষ্য কোটায় সুযোগ দেওয়ার জন্য। এটা বাংলাদেশের প্রথম পোষ্য কোটার সমাধি হিসেবে থেকে যাবে। এই সমাধিস্থল প্যারিস রোডের পাশেই। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে-যেতে এটা ভালোমতোই দেখবেন, দেখে যদি তাঁদের বিবেকবোধে একটু বাধে। তাহলে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে তাঁরা পোষ্য কোটা থেকে নিজেরাই নিজেদের তুলে নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিষ্কার করে জানাতে চাই, যদি সমাধিস্থলে ন্যূনতম আক্রমণের চিন্তা করেন, তাহলে এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ হবে।’

আরও পড়ুন

এদিকে পোষ্য কোটার প্রতীকী সেই কবরের পাশে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে চলছে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

আজ দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পোষ্য কোটার প্রতীকী কবরের পাশে দুটি বাঁশ দিয়ে একটি ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। ব্যানারের ওপরে বড় করে লেখা আছে, ‘জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি’। ব্যানারের এক পাশে লেখা, ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রতীকী হিসেবে মাঝে লাল বক্সে জুতা নিক্ষেপ করুন’। শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে সেই ব্যানারে জুতা নিক্ষেপ করছেন। এদিকে অনেকে প্রতীকী কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। কেউ কেউ আবার ছবিও তুলছেন।

আরও পড়ুন

গতকাল রাতে শিক্ষার্থীরা জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেকোনো যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু জুতা নিক্ষেপের মতো অশোভনীয় কর্মসূচি একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মর্যাদা এবং ভাবমূর্তির সঙ্গে যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আন্দোলনের কর্মসূচি কিংবা প্রতিবাদের ভাষা রুচিবোধসম্পন্ন এবং মার্জিত হওয়া প্রয়োজন। আমি জুতা নিক্ষেপের মতো নিম্নমানের কর্মসূচি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিকট অনুরোধ রাখছি।’