কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও বরুড়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বর্তমান দুই চেয়ারম্যান
ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ও বরুড়া উপজেলার চেয়ারম্যান এ এন এম মইনুল ইসলাম। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা আবারও প্রার্থী হয়েছেন।
গোলাম সারওয়ারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই (বাবলু)। তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন। অন্যদিকে মইনুল ইসলামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্যালক হামিদ লতিফ ভূঁইয়া। তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কুমিল্লার বরুড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম। দুই সংসদ সদস্যের অনুসারীরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। অন্যদিকে ওই দুই চেয়ারম্যানের অনেক নেতা-কর্মী ভোটের মাঠে নেই। এ অবস্থায় তাঁরা দুজন বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে এই দুটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলা
সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন কাপ-পিরিচ প্রতীকে গোলাম সারওয়ার, হেলিকপ্টার প্রতীকে আবদুল হাই এবং আনারস প্রতীকে মো. আক্তারুজ্জামান (রিপন)। গোলাম সারওয়ার টানা তিন মেয়াদে (২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত) সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার। লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহীন তাঁর আরেক ভাইয়ের ছেলে।
সারওয়ারকে ঠেকাতে এবার প্রার্থী হয়েছেন আবদুল হাই। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের ভাইস চেয়ারম্যান। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল হাই। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন, সেনানিবাস এলাকা) আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দীনের অনুসারী আবদুল হাই।
গত সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের হাজি আক্রাম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগের ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মতবিনিময় সভায় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীনের সঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হাইকে দেখা যায়। আবদুল হাইয়ের হাত উঁচিয়ে ধরে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন সংসদ সদস্য বাহাউদ্দীন।
গোলাম সারওয়ার অভিযোগ করেন, ‘সংসদ সদস্য বাহার ভাই (বাহাউদ্দীন) আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল হাই বাবলুর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার কথা বলেন। তাঁর অনুসারী কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আমার বিপক্ষে মাঠে নামিয়েছেন। আমার পক্ষের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ধমকিয়ে বাবলুর (আবদুল হাই) পক্ষে নেওয়া হয়। পুরো বহিরাগতরা আমার নির্বাচনী এলাকায়।’
এ বিষয়ে আবদুল হাই বলেন, দল এবার প্রার্থিতা উন্মুক্ত করেছে। গত ১৫ বছর গোলাম সারওয়ারের পরিবারের কাছে জিম্মি ছিলেন সদর দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দারা। এলাকার মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি। একটি পরিবারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। জনপ্রিয়তা নেই দেখে তিনি (সারওয়ার) কেবলই অভিযোগ করছেন। তাঁদের পক্ষে কোনো কর্মী নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আজ হেলিকপ্টারের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমার রাজনৈতিক গুরু, যাঁর হাত দিয়ে আমার ছাত্ররাজনীতি শুরু, তিনি আমার পক্ষে আছেন। তিনি তো নির্বাচনী এলাকার ভেতরে গিয়ে কোনো ভোট চান না।’
বরুড়া উপজেলা
বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তিনজন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান এ এন এম মইনুল ইসলাম (হেলিকপ্টার প্রতীক), মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন (লিংকন) এবং আনারস প্রতীকের প্রার্থী হামিদ লতিফ ভূঁইয়া। নাসির উদ্দিনকে প্রচারে দেখা যায়নি।
হামিদ লতিফ ভূঁইয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের স্ত্রীর ভাই। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তবে তাঁর পক্ষে কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম ও তাঁর অনুসারীরা মাঠে আছেন। সংসদ সদস্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
গত মঙ্গলবার কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ঝলম এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বরুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হামিদ লতিফ ভূঁইয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় হামিদ লতিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করছি না। তিনি আমাকে প্রথমে নির্বাচন করতে না করেন। পরে বরুড়ার সংসদ সদস্য শামীম সাহেব আমাকে নির্বাচন করার অনুরোধ করেন। এটা শুনে পরে মন্ত্রী মহোদয় রাজি হন। আমি বরুড়াকে সন্ত্রাস, মাদক ও কিশোর গ্যাংমুক্ত করতে চাই।’
এ এন এম মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। সংসদ সদস্যদের লোকজন সবাই আনারস প্রতীকের পক্ষে। আমাকে যুদ্ধ করেই এগোতে হচ্ছে। আমি প্রভাবমুক্ত ও পুলিশি হয়রানিমুক্ত নির্বাচন চাই।’