সাতক্ষীরায় যুবককে আটকের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১০ বছর পর আদালতে মামলা

আদালতপ্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরার দেবহাটায় এক যুবককে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগে ১০ বছর পর আদালতে মামলা হয়েছে। এতে আসামি হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, র‌্যাব ক্যাম্পের তৎকালীন মেজর আহম্মেদ হোসেনসহ ৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

দেবহাটা উপজেলার উত্তর কুলিয়া গ্রামের মারুফ হোসেনকে হত্যার অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে। মারুফ হোসেনের বড় ভাই মোকফুর রহমান বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বুধবার এ মামলা করেন। মামলায় মারুফ হোসেনের সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরেক ব্যক্তিকেও হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিচারক চাঁদ মো. আবদুল আলীম আল রাজী মামলাটি গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার খুলনার উপমহাপুলিশ পরিদর্শককে অথবা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৭ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরার তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল হক, দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার গোলজার, দেবহাটা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারক চন্দ্র বিশ্বাস, দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, কুলিয়া ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুল হক, দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি প্রমুখ। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৫০ জনকে।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে কুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল হকের সঙ্গে মারুফ হোসেনের বিরোধ ছিল। তারাই অংশ হিসেবে মারুফকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যার অংশ হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল হকের সুপারিশে ও পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে কয়েকজন আসামি ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি বালিথা গ্রাম থেকে মারুফ হোসেনকে মারপিট করতে করতে পুলিশের পিকআপে তুলে দেবহাটা থানার দিকে নিয়ে যায়। পরদিন আসাদুল হকের কাছে যান মারুফের স্বজনেরা। মারুফকে ছাড়াতে আসাদুল হক পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। স্বজনেরা এক লাখ টাকা দিয়ে মুক্তির পর বাকি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৬ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নারিকেলী গ্রামের রাস্তার ওপর মারুফ ও অপর একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে পিকআপ থেকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরে তাঁদের রক্তাক্ত অবস্থায় পিকআপে তুলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে মারুফসহ দুজনের লাশ সদর হাসপাতালে দেখতে যান স্বজনেরা। পরে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মারুফের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ রাতেই দেবহাটা থানায়ম মারুফসহ ৫০-৬০ জনকে আসামি করে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি সাতক্ষীরা জজ কোর্টে বিচারাধীন।