ঝিনাইদহের এক গ্রামে ২৫ বছর ধরে তরুণদের উদ্যোগে ইফতার

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চাপালী গ্রামের যুবকদের আয়োজনে ২৫ বছর ধরে চলছে একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন। গত মঙ্গলবার চাপালী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

আসরের নামাজের পর শুরু হয়ে যায় ঝাড়ামোছার কাজ। গ্রামের যুবক–তরুণেরা দল বেঁধে ইফতারের আয়োজনে নেমে পড়েন। কেউ পাটি বিছান, কেউ প্লেট ও পানি দেওয়ার কাজ করেন, কেউবা খাবার পরিবেশন করেন। মসজিদে চলে ধর্মীয় আলোচনা, গ্রামের রোজাদার ও পথচারী মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে বসে যান খাবার সামনে নিয়ে। ইফতারের আগে মোনাজাতে অংশ নেন উপস্থিত সবাই। এরপর শুরু হয় ইফতার।

২৫ বছর ধরে এভাবে ইফতার করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের যুবকেরা। চাপালী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে পুরো রমজান মাস চলে এই ইফতার আয়োজন।

চাপালী যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম বলেন, তাঁদের গ্রামে একটি মসজিদ আছে। মসজিদটি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০০০ সালের আগে গ্রামে একসঙ্গে ইফতারের রেওয়াজ ছিল না। এতে গ্রামের সবাই ঠিকমতো ইফতার করতে পারতেন না। অনেক দরিদ্র পরিবারের সদস্য ঠিকমতো ইফতারি না পেয়ে কোনোরকমে ইফতার করতেন।

আবদুর রহিম বলতে থাকেন, ২০০০ সালে গ্রামে চাপালী পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া আছে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত চাপালী যুব সংঘ। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা গ্রামের রোজাদার ও মুসাফিরদের কথা চিন্তা করে ২০০০ সালে মসজিদ প্রাঙ্গণে ইফতারের আয়োজন শুরু করেন, যা এখনো চলছে।

চাপালী পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ইফতেখার উল ইসলাম বলেন, রমজানের শুরুর আগে তাঁরা গ্রামের সচ্ছল ও ইফতারি দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের একটি তালিকা করেন। তালিকা অনুযায়ী রমজানের ৩০ দিনই তাঁরা ইফতারের আয়োজন করেন। ইফতারের আয়োজনের প্রয়োজনে তাঁরা থালা-প্লেট, জগ-বালতি, পাটি, চট—সব কিনে রেখেছেন। রোজার মাস শুরু হলেই তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজে নেমে যান। ২০ থেকে ২৫ জনের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন বিকেল হলেই স্বেচ্ছাসেবকেরা মসজিদের মাঠে চলে আসেন। শুরু হয়ে যায় ইফতার মাহফিলের কাজ। এভাবে প্রতিবছর ইফতারের আয়োজন করা হয়। এ কার্যক্রমে প্রতিবছর ইফতারি দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

চাপালী জামে মসজিদের ইমাম নূর হাসান জানান, গ্রামের যুবকদের এই একতা ও একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁদের এ আয়োজনে অনেক পথচারী রোজাদারেরাও অংশ নিচ্ছেন।

এক দিনের ইফতারের আয়োজক মীর জাভেদ পারভেজ বলেন, মানুষকে এক দিন ইফতার করানোর ইচ্ছা অনেকের থাকে। কিন্তু আয়োজন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। যুবকদের এ আয়োজন তাঁদের ইফতার দেওয়ার কাজ সহজ করে দেয়। এবার তিনি যে আয়োজন করেছেন, তা সুন্দরভাবে এই যুবকেরা সম্পন্ন করে দিয়েছেন।

বাড়িতে ইফতারির ব্যবস্থা থাকলেও মসজিদে ছুটে যান বলে জানালেন চাপালী গ্রামের আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, সুন্দর আয়োজন। সব বয়সের, সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে ইফতার করে আনন্দ পাওয়া যায়।