শ্রীমঙ্গলে ফাঁকা নেই হোটেল-রিসোর্ট, ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখর

চায়ের রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকেরা। মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা–বাগানে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে ‘চায়ের রাজধানী’খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। চা-বাগানসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় করছেন তাঁরা। হোটেল-রিসোর্টমালিকেরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টই আজ ঈদের তৃতীয় দিন পরিপূর্ণ হয়ে আছে।

সরেজমিনে ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা-বাগান, পর্যটন এলাকা ও হোটেল-রিসোর্ট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পর্যটন এলাকার চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁয় ভিড় দেখা গেছে। শ্রীমঙ্গলের বধ্যভূমি একাত্তর, চা-কন্যার ভাস্কর্য, ভাড়াউড়া চা-বাগান, বিটিআরআই রাধানগর, সাত রং-এর চায়ের দোকান, মণিপুরিপাড়া ইত্যাদি এলাকাসহ শ্রীমঙ্গল উপজেলার পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেকে পর্যটকেরা ভিড় করেছেন। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের। তা ছাড়া ‘চাঁদের গাড়ি’খ্যাত জিপগাড়িগুলোয় চড়ে পর্যটকদের উল্লাস করতেও দেখা গেছে।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা তারেক হাসান বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে এসে অনেক ভালো লাগল। চারদিকে সবুজ চা-বাগানের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রশান্তি লাগছে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে মন চাচ্ছে।’ ফাতেমা বেগম নামের একজন পর্যটক বলেন, ‘চা-বাগানে এসে ছবি তুললাম। এই প্রথম চা-বাগানে আসা। যেদিকে যাচ্ছি, ভালো লাগছে। শ্রীমঙ্গল এসে ভালো সময় কাটল।’

তোফাজ্জল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘রাতে রওনা দিয়েছিলাম প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে। সকালে এসে রিসোর্টে উঠেছি। এখন বের হয়েছি। গরম একটু বেশি, তবে ভালো লাগছে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আনারস খাচ্ছি, চা-বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অনেক কিছু দেখার আছে শ্রীমঙ্গলে।’

চামুং রেস্তোরাঁর পরিচালক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে স্থানীয়দের ভিড় ছিল দুই দিন। পর্যটকেরাও ছিলেন। আমরা পর্যটক ও স্থানীয়দের ভালো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি এই ঈদের ছুটিতে ভালো বেচাকেনা হবে।’ আজ ঈদের তৃতীয় দিন প্রচুর পর্যটক এসেছেন বলেও জানান তিনি।

শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর অ্যান্ড ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ঈদের তৃতীয় দিন শহরের কিছু হোটেল ছাড়া ছোট বড় সব রিসোর্টেই কোনো আসন ফাঁকা নেই। প্রচুর পর্যটক শ্রীমঙ্গলে, ঈদ উপলক্ষে আমরা ট্যুর গাইডরা প্রচুর বুকিং পেয়েছি। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন। দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায় পর্যটকেরা ছিনতাই বা বিভিন্ন কারণে হয়রানির শিকার হলেও শ্রীমঙ্গল আসা পর্যটকেরা শ্রীমঙ্গল এসে রুমে উঠে পুরো জেলা ঘুরে দেখেন, কিন্তু ছিনতাই বা হয়রানি হয় না বললেই চলে। এ জন্য পর্যটকদের কাছে শ্রীমঙ্গল নিরাপদ জায়গা। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই যাতে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি বেশ লম্বা থাকায় প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করেছি। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে নজরদারি রাখছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানার পুলিশ, র‍্যাব সাদা পোশাকেও আমাদের টুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করে সুন্দরভাবেই বাড়ি ফিরতে পারেন, আমরা সেভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা রেখেছি।’