২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নারায়ণগঞ্জে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে, শিশু আক্রান্তের হার বেশি

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৪ মাস বয়সী আরবিকে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৭ মাস বয়সী তাবাসসুমকে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আট থেকে নয় দিন ধরে তাবাসসুম জ্বর–সর্দি–কাশিতে ভুগছিল। শুরুতে বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে তাবাসসুমকে খাওয়ানো হয়। তবে এতে কোনো উন্নতি হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাবাসসুমের নানি আলেয়া বেগম বলেন, তাবাসসুমের সর্দি-কাশি থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির পর নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে। ছয় দিন ধরে এই হাসপাতালে তার নাতনি চিকিৎসাধীন। তবে এখন তাবাসসুমের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে নারায়ণগঞ্জে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে রোগীরা শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল ও শহরের মণ্ডলপাড়া এলাকায় অবস্থিত ১৫০ শয্যা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) ভিড় করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। শীতের প্রকোপ আরও কিছু দিন থাকলে রোগীর সংখ্যাও বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

দুই হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ভর্তি রোগীদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক রোগী হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে হাসপাতালে মোট রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নভেম্বর মাসে ৬০০ শিশু এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ডিসেম্বর মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ৭৫০ শিশু।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফেরদৌসী আক্তার জানান, হাসপাতালের নিচ তলার ১৮ নং ওয়ার্ডে বর্তমানে শিশুদের জন্য শয্যা আছে ২৪টি। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ২১ রোগী ভর্তি ছিল। এই ওয়ার্ডে গত নভেম্বর মাসে শিশু রোগী ভর্তি ছিল ১৪৭ ও ডিসেম্বর মাসে ভর্তি ছিল ১২৩।  

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৫ শয্যার বিপরীতের রোগী ভর্তি আছে ৮ জন। এর মধ্যে ৭ জনই ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। গত নভেম্বর মাসে শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৭৩ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৫২ জন।

ভিডিও কলের মাধ্যমে ছেলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে স্বজনকে জানাচ্ছেন মা নিঝুম মজুমদার
ছবি: প্রথম আলো

দুই হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ভর্তি রোগীদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক রোগী হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে কথা হয় পলি আক্তারের সঙ্গে। তাঁরা মেয়ে ইন্নি আক্তার (৮) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ দিন ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি আছে। পলি আক্তারে বলেন, ‘সর্দি–ঠান্ডা থেকে মেয়ের ফুসফুসে পানি জমে গেছে। শুরুতে ঠান্ডা লাগার পর তেমন গুরুত্ব দেইনি। মনে করছি, এমনিতেই সেরে যাবে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।’

শহরের গলাচিপা এলাকার ১০ মাস বয়সী সর্বরাজ মজুমদারকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে গত মঙ্গলবার। তার মা নিঝুম মজুমদার বলেন, এক মাস ধরেই তাঁর ছেলের সর্দি-কাশির সমস্যা ছিল। একপর্যায়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। হাসপাতালের ভর্তির পর নিউমোনিয়া ধরা পড়েছে।

৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালু বেড়েছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকা হওয়ায় বাতাসে ধূলিকণার মাত্রাও বেশি। এতে শিশুরা আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। শিশুদের ঠান্ডাজনিত এসব রোগ থেকে বাঁচাতে ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শেখ ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, এই শীতে নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী বেশি আসছে। বয়স্কদের তুলনায় শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। এসব রোগ এড়িতে চলতে সব সময় মাস্ক পরতে হবে। এ ছাড়া শিশুদের শীতের পোশাক পরিয়ে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।