‘ভবনের অভাবে’ চালু হয়নি উত্তরা পূর্ব থানা, ফাঁড়িতে শুরু খিলক্ষেত থানার কার্যক্রম
হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ৬ দিন বন্ধ থাকার পর সেনাবাহিনীর পাহারায় সীমিত পরিসরে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে থানাসংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখনো বন্ধ রয়েছে উত্তরা পূর্ব থানার কার্যক্রম। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেখানে সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছে। তবে পুলিশ সদস্যরা যোগ দেননি। উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দাবি, বিকল্প ভবন না পাওয়ায় কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীর খিলক্ষেত ও উত্তরা পূর্ব থানায় হামলা, ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে দুটি থানাই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম।
ঢাকা-বিমানবন্দর সড়কের পাশে নিকুঞ্জ-২ এলাকায় অবস্থিত খিলক্ষেত থানা। থানা ভবনটি তিনতলা। নিচতলায় ডিউটি অফিসার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্য কর্মকর্তাদের কার্যালয়। দোতলার একাংশ ও তিনতলার পুরোটা পুলিশ সদস্যের ব্যারাক। আছে হাজতখানা, অস্ত্রাগারসহ আলামত সংরক্ষণাগার।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো থানা ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কার্যক্রম চলছে না। আগুনে পুড়েছে প্রায় সবগুলো কক্ষ। পুড়ে ছাই হয়েছে বিভিন্ন নথি ও মালামাল। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় সব কটি গাড়ি। ভবনটি পাহারা দিচ্ছেন ৮ থেকে ১০ জন আনসার সদস্য। সেবা নিতে অনেকেই থানায় আসছেন। আনসার সদস্যরা সেবাপ্রার্থীদের দেখিয়ে দিচ্ছেন থানা থেকে অল্প দূরত্বের একটি পুলিশ ফাঁড়ি। সেবাপ্রার্থীরা তাঁদের কথামতো যাচ্ছেন ওই ফাঁড়ির দিকে।
কথা হলে আনসার ব্যাটালিয়নের নায়েক মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কাজ করার কোনো অবস্থা নেই। যেখানে যাবেন, সেখানেই কালি। পোড়া গন্ধ। স্যাররা (পুলিশ) প্রথমে চেষ্টা করছিলেন এখানে কাজ শুরু করার জন্য; কিন্তু পারেননি। পরে ফাঁড়িতে চলে গেছেন।’
দেখা যায়, পুলিশ ফাঁড়িটি নিকুঞ্জ-২-এর ১১ নম্বর সড়কের’ ২-এর বি’ বাসায়। ফাঁড়ির দোতলার একটি কক্ষে চেয়ার ও টেবিল নিয়ে বসেছেন ডিউটি অফিসার। পাশেই পাহারা দিচ্ছেন কয়েকজন সেনাসদস্য। পাশাপাশি ডিউটি অফিসারের পাশে অবস্থান করছেন অন্য পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তারা।
সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সহকারী কমিশনার শেখ মোক্তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, খিলক্ষেত থানার ভেতর সব অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তাই আপাতত অস্থায়ীভাবে ফাঁড়িতে কাজ শুরু করা হয়েছে। আপাতত সাধারণ ডায়েরিগুলো (জিডি) নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে পুনরায় সব রকম মামলা বা অভিযোগ নেওয়া হবে।
পাহারায় থাকা সেনাসদস্যদের মধ্যে ওয়ারেন্টে অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে সব রকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সকাল থেকেই ১০ জন সেনাসদস্যের একটি টিম নিয়ে থানা পাহারা দিচ্ছি।’
এখনো বন্ধ উত্তরা পূর্ব থানা
ঢাকা মহানগরের ব্যস্ততম থানাগুলোর একটি উত্তরা পূর্ব থানা। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পুলিশি সেবা গ্রহণ করেন এই থানা থেকে। কিন্তু ৫ আগস্ট থেকে থানাটি আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। পুলিশের কার্যক্রম শুরু করতে থানাটিতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাসদস্য। কিন্তু তারপরও কাজে যোগ দিচ্ছেন না কোনো পুলিশ সদস্য।
রোববার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো থানাটি ধ্বংসস্তূপ। মূল ফটকের সামনে পড়ে আছে আগুনে পোড়া ৭ থেকে ৮টি গাড়ি। থানার সবগুলো কক্ষ আগুনে পোড়া। নেই চেয়ার-টেবিল। পড়ে আছে আগুনে পোড়া বিভিন্ন কাগজপত্র। ভবনের দেয়াল ও জানালায় আগুনের পোড়া চিহ্ন। এর মধ্যেই থানার সামনে অবস্থান করছেন ৯ জন সেনা ও ৮ জন আনসার সদস্য। কিন্তু নেই কোনো পুলিশ সদস্য। অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে থানায় আসছেন। কিন্তু কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আবার ফিরে যাচ্ছেন।
থানার সামনে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মো. তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট রাত থেকেই বিভিন্ন শিফটে ভাগ হয়ে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত। কিন্তু তারপরও পুলিশ আসছে না। কেউ কেউ (পুলিশ) এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিল্ডিংয়ে (থানা ভবন) সংস্কার ছাড়া কাজ করা সম্ভব না। আমরা বিকল্প ভবন খুঁজছি। আশপাশে কোথাও ভবন পেলেই আমরা থানার কার্যক্রম শুরু করব।’