এমসি কলেজে শিক্ষার্থীকে পেটানোর প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

এমসি কলেজে শিক্ষার্থীকে পেটানোর প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। আজ বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর প্রতিবাদে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাতে এসব কর্মসূচি থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব ও মেহেদী সজীব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজীব।

আরও পড়ুন

সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে ফেসবুকের এক কমেন্টের জেরে শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় শিবিরের দিকে অভিযোগ উঠেছে। তবে শিবিরের কেন্দ্র থেকে এ সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। শিবির নির্যাতিত ছাত্রসংগঠন; কিন্তু তারা ভিন্নমত দমনে এ ধরনের আচরণ করলে মেনে নেওয়া হবে না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ। আজ বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

মেহেদী সজীব বলেন, ‘৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন পেশিশক্তির রাজনীতি প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছিলাম। তবুও কুয়েট ও সিলেটের এমসি কলেজে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনা বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এ ঘটনায় জড়িত যে সংগঠনের নাম উঠে এসেছে, তা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আবার অনেকে প্রচারণা চালাচ্ছে নির্যাতিত শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের দোসর। ওই শিক্ষার্থী যেই হোক না কেন, কোনোভাবেই এ ধরনের আধিপত্যবাদী রাজনীতি মেনে নেওয়া হবে না।’

এদিকে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে রাত ৯টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন একদল শিক্ষার্থী। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘লীগ শিবির ছাত্রদল, সন্ত্রাস করে তিন দল’, ‘শিবির সন্ত্রাসী করে, ইন্টেরিম কী করে’, ‘সন্ত্রাস আর শিক্ষা, একসাথে চলে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল পরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান। এতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ান, গণ–অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আবদুর রশিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম প্রমুখ।

সমাবেশে আবদুর রশিদ বলেন, ‘যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা রাজপথে ছিলাম, মাত্র সাত মাসের মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর এমন কার্যকলাপ আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে বিশ্বাসী। আপনারা দয়া করে এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক নোংরামি দেখাবেন না।’

তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গত ৫ আগস্ট সবাই একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের সংগ্রামে নেমেছিলাম, আজ তারাই বিভক্ত হয়ে ছাত্রলীগের মতো একই কায়দায় কুয়েট, সিলেটের এমসি কলেজ ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদল ও শিবিরের মতো গোষ্ঠীরা হামলা করছে। আপনারা যদি আবারও এই বাংলাদেশে পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চান, তাহলে ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। ছাত্রসমাজ যেভাবে শেখ হাসিনা ও ক্যাম্পাসগুলো থেকে ছাত্রলীগকে বিদায় করেছে, সেভাবেই ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মতো যারা গঠনমূলক রাজনীতি ভুলে গিয়ে পেশিশক্তির ব্যবহার করে সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তাদেরও বিদায় করবে।’

উল্লেখ্য, বুধবার রাত ১২টার দিকে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এমসি কলেজ শাখার সহতথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক সম্পাদক। মিজানুর রহমানের দাবি, তাঁকে এমসি ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা এক নেতাকে রড দিয়ে মারধর করেছেন।

তবে কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইসমাঈল খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো নেতা–কর্মীরা জড়িত নন। ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে তৃতীয় একটি পক্ষ কলকাঠি নাড়াচ্ছে।