ব্যাগ কাঁধে, ফোন হাতে পথে পথে
রাজশাহীতে এখন চলতে-ফিরতে দেখা যায়, কুরিয়ার সার্ভিসের রাইডাররা কেউ বাইসাইকেলে, কেউ মোটরসাইকেলে পার্সেল হোম ডেলিভারি করতে ছুটছেন। তাঁদের কাঁধে বা পিঠে কোনো একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যাগ। কেউ খাবার নিয়ে ছুটছেন, কেউ জামাকাপড়, কেউবা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ছুটছেন গ্রাহকের ঠিকানায়। খানিক পরপর মুঠোফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাচ্ছেন। কখনো কথা বলছেন।
রাজশাহীতে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ কম। অনেক শিক্ষার্থী এখন পড়াশোনার পাশাপাশি এই পেশায় যোগ দিয়েছেন। দু-একজন তরুণীকেও দেখা গেল, তাঁরা বাইসাইকেলে চড়ে, কেউ পায়ে হেঁটেও ডেলিভারির কাজ করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজকে খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে নিয়ে অনেকেই নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করছেন। ঈদ সামনে, তাঁদের যেন নাওয়াখাওয়ার সময় নেই।
গত রোববার সন্ধ্যার পর নগরের সাগরপাড়া এলাকায় দেখা হয় শিলা আক্তারের সঙ্গে। তাঁর পিঠে তখন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যাগ। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুরে। তিনি এইচএসসি পাস করেছেন। স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় আছেন। এই ফাঁকে গত তিন মাস ধরে তিনি কুরিয়ার সার্ভিসের এই কাজ করছেন। তাঁরা বাবা মারা গেছেন। মা সংসারের অভিভাবক। তাঁর ছোট একটি ভাই ও বোন আছে। তাদের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই তাঁকে পড়াশোনা করতে হবে।
রাইডার আমিনুল ইসলামকে (২৫) পাওয়া গেল নগরের মালোপাড়া এলাকায়। নিজের মোটরসাইকেলে পার্সেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঈদ উপলক্ষে তাঁদের অর্ডার বেড়েছে। পার্সেলও আসছে বেশি। দিনে ৫০ থেকে ৬০টি পার্সেল হোম ডেলিভারি করতে হয়। রাজশাহীতে তিনি বছরখানেক হলো এই কাজ করছেন। খণ্ডকালীন এই চাকরির পাশাপাশি তিনি পড়াশোনাও করছেন। রাজশাহী সিটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কর্তৃপক্ষ এই কাজের পাশাপাশি পড়াশোনারও সুযোগ দেয়। এ জন্য তাঁর অসুবিধা হচ্ছে না। তাঁর বাড়ি নগরের তালাইমারী এলাকায়। তিনি মাসে ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা আয় করছেন। তিনি বলেন, তাঁর যে পড়াশোনা, তা দিয়ে তিনি অন্য কোনো চাকরি করে এই পরিমাণ আয় করতে পারতেন না। তিনি বিয়ে করেছেন। একটি বাচ্চা আছে। তাঁর দিন ভালোই চলে যাচ্ছে।
শামসুল ইসলাম রাজশাহী কলেজেরœস্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনিও কুরিয়ারের হোম ডেলিভারির কাজ করেন। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটি এলাকায় হোম ডেলিভারির দায়িত্বে রয়েছেন। উপজেলার মদনহাটি এলাকায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বাড়িতে মা–বাবাকে ফেলে দূরে কোথাও কাজে যেতে পারছেন না। আবার বিয়ে করেছেন। একটা বাচ্চাও আছে। রাজশাহীতে খণ্ডকালীন অন্য কোনো চাকরিও পাওয়া যায় না। তাই তিন বছর ধরে তিনি এই কুরিয়ারেই কাজ করছেন। নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি পার্সেল হোম ডেলিভারির কাজ করেন। মাসে তাঁর প্রায় ২৫ হাজার টাকা আয় হয়।
রেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপক মওদুদ আহমেদ জানালেন, তাঁদের ২২ জন রাইডার আছেন। তাঁরা তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো আয় করছেন। অনেকেই এই কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও করছেন।
ফুড প্যান্ডার এলাকা ব্যবস্থাপক রফিকুল হাসান বলেন, রাজশাহী নগরে তাঁদের দুই শতাধিক রাইডার রয়েছেন। তাঁদের এখানে একবার কাজ শুরু করলে কেউ আর ছেড়ে যান না। রাজশাহীতে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ কম। এই সময়ে বেকার ছেলেমেয়েরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানে নতুন কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।