বসুন্দিয়া হাটজুড়ে কাঁঠাল, বাতাসে ম-ম ঘ্রাণ
সকাল হতে না হতে দুই-একজন করে কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন। দেখতে দেখতে সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে কাঁঠাল ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে ভরে যায় হাটের খালি জায়গা। আস্তে আস্তে খালি জায়গা ছাপিয়ে হাট চলে যায় সড়কের ওপর। বাতাসে তখন পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ। যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া কাঁঠালের হাটের গত মঙ্গলবারে সকালটা ছিল এ রকমই।
জেলার সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসুন্দিয়া। শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাটবার। কাঁঠালের মৌসুমে এই সাপ্তাহিক দুই হাটবারে বসুন্দিয়া পায় নতুন চেহারা।
যশোর শহর থেকে পূর্ব দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে ১৭ কিলোমিটার গেলে বসুন্দিয়া মোড়। সেখান থেকে বসুন্দিয়া মোড়-ধলগ্রাম সড়ক দিয়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে বসুন্দিয়া কাঁঠালের হাট। হাটের পাশে ভৈরব নদ। যশোর শহর থেকে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়েও বসুন্দিয়া কাঁঠালের হাটে যাওয়া যায়।
হাটে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে শুধু কাঁঠাল আর কাঁঠাল। সড়কের দুই পাশজুড়ে ছোট-বড় কাঁঠালের স্তূপ। কিছুটা ব্যবধান রেখে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে কাঁঠালবোঝাই ভ্যান। পাশে পিকআপে তোলা হচ্ছে কাঁঠাল।
হাটে কথা হয় কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এই হাটের বয়স এক শ বছরের বেশি। একসময় ব্যবসায়ীরা দূরদূরান্ত থেকে বড় বড় নৌকা নিয়ে ভৈরব নদ দিয়ে হাটে আসতেন। হাট থেকে কাঁঠাল কিনে নৌকা বোঝাই করে আবার তাঁরা ফিরে যেতেন। বৈশাখ মাসের ১৫ তারিখ থেকে কাঁঠালের হাট বসে, চলে মধ্য শ্রাবণ পর্যন্ত। তবে জ্যৈষ্ঠ মাসেই জমে বেশি। এই সময়ে হাটে এক থেকে দুই লাখ কাঁঠাল বেচাকেনা হয়। ভোর পাঁচটা থেকে হাট শুরু হয়ে চলে বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত। এরপর রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত চলে পিকআপ ও ট্রাকে কাঁঠাল ওঠানো।
ব্যাটারিচালিত ভ্যানে ২১টি কাঁঠাল বোঝাই করে হাটে এসেছেন মাসুদ বিশ্বাস। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বহরামপুর গ্রাম থেকে তিনি এসেছেন। বললেন, ‘আমার মাত্র পাঁচটি কাঁঠালগাছ। এবার আমার এক শর মতো কাঁঠাল হয়েছে। তবে দীর্ঘ খরার কারণে কাঁঠাল এবার খুব একটা বড় হয়নি। প্রতিটি কাঁঠাল গড়ে ৩৫ টাকা করে বিক্রি করছি। কাঁঠালের দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি।’
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের আহাদ গাজী বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার মুখে এই হাটের অনেক গল্প শুনেছি। এখান থেকে কাঁঠাল খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, মাদারীপুর, ভোলা ও ঝালকাঠিতে যায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। তবে কৃষক অন্য ফলের মতো কাঁঠালগাছের তেমন পরিচর্যা করেন না। কাঁঠালগাছের ঠিকমতো পরিচর্যা করলে আরও বেশি কাঁঠাল পাওয়া সম্ভব। কাঁঠালগাছ প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করেও ফল দিতে পারে। এ বছর টানা খরার মধ্যেও জেলায় কাঁঠালের উৎপাদন খারাপ হয়নি। চাষিরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন।