চট্টগ্রামে সন্তান জন্মদানে দুই মাসে—ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ১৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে মায়ের মৃত্যুর ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত পর্যালোচনা কমিটির সভায় এই তথ্য জানানো হয়। আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১১ সদস্যের কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কমিটির প্রধান চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার সভাপতিত্ব করেন। সভায় যেসব হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসব প্রতিনিধির কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। এ পর্যন্ত মারা যাওয়া প্রসূতি বা মায়ের হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ওষুধের ব্যবহার, কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করার জন্য রোগীর সব তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
সভায় উপস্থিত সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২ মাসে অস্ত্রোপচারের পর ১৩ জন মায়ের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। আরও কয়েকজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগী কেন মারা গেল, তাঁদের ভর্তি থেকে শুরু করে সবকিছুর বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এসব তথ্য দেওয়ার পর পর্যালোচনা কমিটি পুনরায় বসবে। কী ওষুধ ব্যবহার করেছিল, তা–ও পর্যালোচনায় আনা হবে।’
এ ছাড়া গত দুই মাসে অস্ত্রোপচারের সময় আরও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কি না, জানতে চেয়ে কাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিঠি দেবেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট সমশেরপাড়ার ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সন্তান জন্মদানে অস্ত্রোপচারের পর মায়ের জটিলতা দেখা দেয়। এভাবে ১৩ প্রসূতির মৃত্যু হয়।
গত ২৮ মার্চ অধিদপ্তর থেকে এসব ঘটনার পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অধ্যাপক সাহেনা আক্তারকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়। এতে সদস্যসচিব করা হয় চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক অং সুই প্রু মারমাকে। ৩০ মার্চ হাসপাতালগুলোকে কমিটির পক্ষ থেকে আজকের সভায় উপস্থিত থাকার চিঠি দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে কমিটির প্রধান অধ্যাপক সাহেনা আক্তার বলেন, হাসপাতালগুলোকে মারা যাওয়া রোগীগুলোর তথ্য সরবরাহ করার জন্য বলা হয়েছে। তথ্য এলে পর্যালোচনা করা হবে। আবার আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে। তারপর অধিদপ্তরকে জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সাহেনা আক্তার বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে এ ধরনের মৃত্যু হয়নি। এমনিতে অন্য জটিলতায় মৃত্যু হয়েছে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে চমেক অবেদনবিদ বিভাগ, মেডিসিন, নেফ্রোলজি, লিভার, হৃদ্রোগ, সার্জারি বিভাগের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের ব্যাখ্যা
দুই মাসে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর মারা যাওয়া রোগীর বিষয়ে হাসপাতালটি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। এতে বলা হয়, এই হাসপাতালে সিজার–পরবর্তী চারজন মা মারা যায়। একজন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছেন। অপরজন এখনো বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই ধরনে ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মতে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ওষুধগুলো ওষুধ প্রশাসন সংগ্রহ করে নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় গঠিত পর্যালোচনা কমিটিকে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।