‘চাইর দিনে বড় বড় গাড়ি আনল, কেউ উদ্ধার করল না, খালি খেদাই দেয়’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্সের ভবনের ভেতর এখনো চাপা আগুন থাকার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি ভবন পুড়ে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় আজ বুধবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি। ভবনটিতে প্রবেশ করে উদ্ধার অভিযান চালানো যাবে কি না, তা জানতে বিশেষজ্ঞ দল ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
গত রোববার রাত ৯টায় রূপগঞ্জের খাদুন এলাকার কারখানাটির ছয়তলা একটি ভবনে লুটপাট চলাকালে নিচতলায় সিঁড়ির মুখে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে ভবনটির ভেতরে থাকা অনেকেই আটকা পড়েন বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। গাজী টায়ার্স কারখানার মালিক নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। রোববার ভোররাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
আগুনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আজ বিকেলে গণপূর্ত অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনটির ভেতর এখনো চাপা আগুন আছে। ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। তাঁরা ভবনে প্রবেশের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কোনো পরামর্শ দিতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর সেই অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান হবে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। শুরুতে তারা গাজী টায়ার্সের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। পরে পুড়ে যাওয়া কারখানার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
বিকেল পাঁচটায় তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস অনবরত এখানে কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ড্রোন দিয়ে ভেতরের অবস্থা দেখেছে। ৪ থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ফ্লোর ধসে পড়েছে। আজকে তারা উদ্ধারকাজ চালাতে পারবে না। ফায়ার সার্ভিস না পারলে সেনাবাহিনী বা অন্য বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকার বিষয়ে হামিদুর রহমান বলেন, ‘যে ব্যক্তি এসে বলছেন যে তাঁর স্বজন নিখোঁজ আছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা আমরা লিপিবদ্ধ করছি। আমরা এখনই সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে নিখোঁজ বলে দাবি করা সংখ্যাটি শতাধিক হয়েছে। এখানে একজন মানুষ থেকে থাকলেও সেটি আমরা খুঁজে বের করার যথাসম্ভব চেষ্টা চালাচ্ছি।’ এ সময় ফায়ার সার্ভিসসহ তদন্ত দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সন্ধ্যা সাতটায় কারখানার বাইরে নিখোঁজদের খোঁজে আসা স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। অন্তত ৫০ জন স্বজন তখন কারখানার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সন্ধ্যায় যখন প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীরা কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এই প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন বৃদ্ধা রাশিদা বেগম ও তাঁর স্বামী আবদুল বাতেন। সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সময় এই দম্পতির সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের ছেলে মো. আমানুল্লাহ (২৫) রোববার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
ছেলের শোকে মুষড়ে পড়া বৃদ্ধা ভাঙা গলায় জানতে চান তার আমানের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল কি না। তিনি বলেন, ‘চাইর দিনে বড় বড় উদ্ধারের গাড়ি আনল। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস আইল। কেউ উদ্ধার করল না। খালি খেদাই দেয়, খালি খেদাই দেয়।’