বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দরজা ভেঙে ছাত্রলীগ কর্মীকে ছিনিয়ে নিলেন সহপাঠীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে আটকে রাখার পর দরজা ভেঙে ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা। গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর ফটকের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
আটক ওই ছাত্রলীগ কর্মীর নাম শাহরিয়ার ওরফে সান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তাঁকে ক্যাম্পাসে পেয়ে আটক করেন একদল শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, শাহরিয়ারকে আটকের পর তাঁকে মারধর করে ক্যাম্পাসের ৩ নম্বর ফটকের নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে আটকে রাখেন ওই শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে পুলিশ ও প্রক্টরকে খবর দেন তাঁরা। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার পর শাহরিয়ারের সহপাঠী আরেক দল শিক্ষার্থী খবর পেয়ে সেখানে আসেন এবং দরজা ভেঙে রাত পৌনে আটটার দিকে তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এ সময় তাঁরা শাহরিয়ারকে নিয়ে বিজয় মিছিলও করেন।
শাহরিয়ারকে আটক করা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যাঁরা তালা ভেঙে শাহরিয়ারকে নিয়ে গেছেন, তাঁরা তাঁর সহপাঠী নন, তাঁরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ অভিযোগ করেন, জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান এই শাহরিয়ার। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য আটকে রেখেছিল। কিন্তু তাঁর সহপাঠী নাম করে কিছু ছাত্রলীগ কর্মী তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তাঁকে (শাহরিয়ার) ছাড়িয়ে নিয়ে যান, যা দুঃখজনক।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী মোশাররফ হোসেন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী শাহরিয়ারকে আটক করে রাখে। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁর নিরাপত্তাকক্ষের দরজা ভেঙে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। যাঁকে তাঁরা আটক করে রেখেছিলেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। গত বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর হামলা এবং ১ আগস্ট পুলিশের কাছে শিক্ষার্থীদের ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি শাহরিয়ার।
শাহরিয়ারকে ছাড়িয়ে নেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শাহরিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে প্রশাসন আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এভাবে একজন ছাত্রকে মারধর করে নিরাপত্তাকর্মীর কক্ষে আটকে রাখা অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁরা দরজা ভেঙেছেন এবং ওই শিক্ষার্থীকে ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা কখনোই তাঁদের প্রশ্রয় দেব না।’
বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটু ঝামেলা হয়েছে বলে খবর দেওয়া হয়েছিল। পরে পুলিশের সদস্যরা গেলে তাঁদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়। পরে আর আমাদের কিছু জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’