‘৭০ বছর বয়স আমার, আগে এত পানি দেখিনি’

ননী বেগম

‘৭০ বছর বয়স আমার। এর আগেও অনেকবার এ রকম বৃষ্টি দেখেছি। দিনের পর দিন বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু কোনোবার এত পানি দেখিনি। কখনো নিজের বাড়ি ছেড়ে কোথাও আশ্রয় নিতে হয়নি।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন বন্যাকবলিত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয় নেওয়া ননী বেগম।

ননী বেগমের মতো অন্তত ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান সড়কের পূর্ব পাশের তিনতলা ভবনটিতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বিদ্যালয় ভবনটির নিচতলায়ও পানি ঢুকে পড়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া এক নারী প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয় নেওয়ার জন্য এখানে এসেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তাহলে এই ভবন ছেড়ে অন্য কোনো ভবনের দিকে ছুটতে হবে সন্তানদের নিয়ে।

বিদ্যালয় ভবনটির নিচতলায় আশ্রয় নেওয়া নাজনীন বেগম বলেন, তাঁরা দুই পরিবারের ১২ সদস্য গতকাল বুধবার রাতে এই বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। নিজেরা বাজার থেকে শুকনো খাবার কিনে এনে খেয়েছেন।

ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেওয়া নুরজাহান বেগম বাজারের দোকান থেকে গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার নিয়ে এসেছেন রান্না করতে। সত্তরোর্ধ্ব এই নারী প্রথম আলোকে বলেন, উপায় না দেখে একজনের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলা কিনে এনেছেন। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে তো আর না খেয়ে থাকা যায় না। তাঁর বাড়ি এর আগেও বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে, কিন্তু এবারের মতো পানি তিনি গত ৫০ বছরে দেখেননি।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া কয়েকটি পরিবার নিজেরাই খাবারের ব্যবস্থা করছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কমপক্ষে আড়াই হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি দেখভাল করছেন।