পরিবারের পাঁচ সদস্য হারিয়ে শোকে বিহ্বল ষাটোর্ধ্ব শান্তি বেগম
আকস্মিক বজ্রপাতে গতকাল বৃহস্পতিবার একসঙ্গে স্বামী, ছেলে, দেবর, নাতি ও জামাতাকে হারিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব শান্তি বেগম। তিনি এখন শোকে মুহ্যমান। স্বজনদের কথা ভেবে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। শান্তি বেগমের আহাজারিতে পুরা বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কান্না ধরে রাখতে পারছেন না।
গতকাল বিকেলে পাশের গ্রামে আমন ধানের চারা তুলতে গিয়েছিলেন শান্তি বেগমের স্বামী বৃদ্ধ শমসের আলী (৬৫)। শমসের আলীর সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই, দুই ছেলে, মেয়ের জামাতা ও নাতি ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে শমসের আলীসহ তাঁর পরিবারের পাঁচজন মারা যান। পরিবারের বাকি এক সদস্যের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মাটিকোড়ায় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে শমসের আলী পরিবারের পাঁচ সদস্য ছাড়াও শিশুসহ আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্গাচাষি শমসের আলীর বাড়ি উল্লাপাড়া পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিবপুর গ্রামে। তিনি মাটিকোড়া গ্রামে শাহ আলম নামের এক কৃষকের কাছ থেকে আমন ধানের চারা কিনে তা তুলতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বজ্রপাতে মারা যান।
শমসের আলী পরিবারের নিহত বাকি সদস্যরা হলেন তাঁর ছোট ভাই আফছার আলী (৬০), ছোট ছেলে শাহিন মিয়া (২১), মেয়ের জামাতা মোকাম মিয়া (৫০), শমসের আলীর নাতি ও মোকাম মিয়ার ছেলে মোন্নাফ আলী (১৮)। এ ঘটনায় শমসের আলীর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একই ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন পঞ্চকোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৪০), একই গ্রামের বাহাদুর হোসেনের ছেলে আবদুল কুদ্দুস (৬০), মোস্তফার মেয়ে রিতু খাতুন (১৪) ও নুরনবীর মেয়ে জান্নাতি (১২)।
উল্লাপাড়া সলপ রেলস্টেশন এলাকার ঘোল ব্যাবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, শমসের আলী দরিদ্র ছিলেন। তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন। গতকালও পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে কৃষিকাজ করতে গিয়েছিলেন। তখন বজ্রপাতে পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। একজন বেঁচে থাকলেও তাঁরও শারীরিক অবস্থা ভালো না।
আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের শত শত মানুষ শমসের আলীর বাড়িতে এসেছেন। একসঙ্গে এতগুলো লাশ দেখেই তাঁরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন।
ওই গ্রামের আবু হাসেম বলেন, ‘এত লাশ আমরা আগে কখনো একসঙ্গে দেখিনি। বজ্রপাতে এত মানুষও মরতে শুনিনি কখনো। তাই সবাই লাশ দেখতে এসে কাঁদছেন। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেন না।’
উল্লাপাড়া পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এক পরিবারের এতগুলো মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এমন ঘটনা এর আগে এই এলাকায় কখনো ঘটেনি। তবে সাধ্যমতো ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন প্রথম আলেকে বলেন, ‘একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ওই পাঁচ পরিবারসহ নিহত প্রতি পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে ২৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’