ঈদযাত্রায় গাজীপুরের ৫ স্থানে ভোগান্তির শঙ্কা
টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিমি অংশের বিভিন্ন স্থানে এখনো কাজ চলছে।
বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানোয় যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পার হলেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার শুরু। ঢাকা ও গাজীপুর—এ দুই জেলার সংযোগ ঘটিয়েছে টঙ্গী সেতু। এ সেতুর দুই দিকেই চলছে র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। তবে এ পথে উড়ালসড়ক নির্মাণ হওয়ায় ওপর দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যাচ্ছে। এরপরও গাজীপুর জেলার মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে (পয়েন্ট) এবার ঈদে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।
গাজীপুর জেলায় যানজটের এসব স্থান চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চিহ্নিত স্থানগুলোয় যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের চার স্থান ও ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড়ে যানজট হতে পারে।
যানজটের সম্ভাব্য স্থানগুলো হলো: গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড ও শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ি বাজার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আরও দুটি স্থানেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে—সিডস্টোর বাজার ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ড। আর গাজীপুরের মধ্যে পঞ্চম স্থানটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা মোড়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে এখন কাজ চলছে। তবে এখন এ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত খানাখন্দ বা ভাঙাচোরা নেই। তবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানোর কারণে যানবাহনের জটলার সৃষ্টি হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মহাসড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম পয়েন্ট চান্দনা চৌরাস্তা। প্রতিবছর ঈদ এলেই সেখানে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ওই পথে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা থাকতে হয়।
চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে গোলাকার উড়ালসড়ক। ওই উড়ালসড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করা যাচ্ছে। ময়মনসিংহের দিকে যাওয়ার পথে উড়ালসড়কটি যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে নিচের যানবাহন চলাচলের জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা–নামা করাচ্ছে। এতে উড়ালসড়ক থেকে নেমেই গতি কমাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের দিক থেকে যাঁরা ঢাকা বা জয়দেবপুরের দিকে যাতায়াত করছেন, তাঁদের পড়তে হচ্ছে যানজটের কবলে। মঙ্গলবার সকালেও সেখানে যানজট দেখা যায়।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কথা হয় ভিআইপি পরিবহনের চালক মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চৌরাস্তা এলাকায় উড়ালসড়ক চালু করা হলেও নিচে এখনো বিআরটি কাজ চলমান। আমাদের যাত্রী ওঠাতে হয়। তাই নিচ দিয়েই চলাচল করতে গিয়ে যানজটে পড়তে হচ্ছে। নিচের কাজ ঈদের আগে শেষ করা গেলে ভালো হতো।’
ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপে গাজীপুরের মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি বড় পার্শ্ব রাস্তা আছে। বড় বড় শিল্পকারখানার যানবাহনগুলো এসব পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে প্রবেশ করার ফলে এখানে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে।
গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, সড়কে অনেক কাজ হচ্ছে, কিন্তু বেশির ভাগ অংশে নানা ধরনের জঞ্জাল থাকে। যেখানে–সেখানে যানবাহন অবৈধ পার্ক করে রাখা হয়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসব পরিষ্কার করতে পুলিশকে কঠোর হতে হবে।
ভবানীপুর এলাকায় একটি ইউটার্ন আছে। এই সড়কের সঙ্গে যুক্ত পশ্চিম দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও পূর্ব দিকে নলজানি। ইউটার্ন থাকায় স্বল্প দূরত্বের গাড়িগুলো ভবানীপুর চৌরাস্তায় মোড় নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ফলে ভবানীপুর চৌরাস্তার যানজট প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। ময়মনসিংহ মহানগরের দিকে যেতে যানজটের আরেকটি পয়েন্ট বাঘের বাজার। পশ্চিমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মূল সড়ক ও পূর্ব দিকে শ্রীপুর সংযোগ সড়ক। দুই পাশের সড়কগুলো ব্যস্ত থাকায় বাঘের বাজারে প্রায়ই যানজট দেখা যায়। ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য এ স্থান হতে পারে ভোগান্তির আরেক কারণ।
বাঘের বাজারের উত্তরে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভয়াবহ যানজটও প্রতিদিনের ঘটনা। পূর্ব দিকে শ্রীপুর উপজেলা সদরে যাওয়ার আঞ্চলিক সড়ক। পশ্চিমে লিচুবাগান হয়ে দোখলা গ্রামের সংযোগ সড়ক। সড়কের দুই পাশেই বিপুলসংখ্যক কলকারখানা ও ঘনবসতি থাকায় গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়িতে ভয়াবহ যানজট দেখা যায়। মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে এই পয়েন্টে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা গেছে।
ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর ও ভালুকা চৌরাস্তা এলাকায় মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে যানজট দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, ভালুকা সদর এলাকায় দুই পাশে দুটি বড় সড়ক ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত। আঞ্চলিক সড়ক দুটি মহাসড়কের মতোই ব্যস্ত। ফলে প্রচুর যানবাহনের চাপ লেগেই থাকে। এই ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি হতে পারে এই স্থান। এ ছাড়া সিডস্টোর এলাকার চিত্রও প্রায় একই। শিল্প এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এটি। তাই সারা দিন প্রচুর গাড়ির চাপ থাকে। এখানেও ভোগান্তির আশঙ্কা আছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা–পুলিশ ও মোবাইল টিম থাকবে। এ ছাড়া ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে। কোনো কারণে যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সেগুলো সিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়। মহাসড়কের সব কটি উড়ালসড়ক আমরা ব্যবহার করব। এ কারণে আশা করছি, এবার ঘরমুখী মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে।’
ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকা প্রতিবছরই ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কথা হয় কেপি পরিবহনের যাত্রী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ এলেই চন্দ্রা এলাকায় যানজটের একটা আতঙ্ক সবার মধ্যে থাকে। যানবাহনের চাপে আমাদের যানজটে পড়তে হয়।’
চন্দ্রা মোড় এলাকায় যানজট নিরসনে প্রতিবছরের মতো এবারও বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে উল্লেখ করে গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ছাড়া থানা–পুলিশও থাকবে। চন্দ্রা মোড় ছাড়াও আশপাশের বাজার এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য থাকবেন। যানজট এড়াতে তাঁরা সক্রিয় থাকবেন।