পঞ্চগড় সীমান্তে ধরা পড়া নীলগাইটি পাঠানো হচ্ছে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে
পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকায় গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ার তিন দিন পর স্ত্রী নীলগাইটিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে পঞ্চগড় বন বিভাগ কার্যালয় থেকে নীলগাইটিকে একটি কাঠের খাঁচায় ভরে ট্রাকে করে কক্সবাজারের চকরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন বনকর্মীরা।
শনিবার দুপুরে নীলগাইটিকে নিতে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পঞ্চগড় বন বিভাগ কার্যালয়ে আসেন। নীলগাইটিকে নেওয়ার পথে একই ট্রাকে গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে আরেকটি পুরুষ নীলগাই নিয়ে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে যাবে প্রতিনিধিদলটি। সেখানে দুটি নীলগাই উন্মুক্ত পরিবেশে রাখা হবে।
পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ নার্সারির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, নীলগাইটিকে পাঠানোর জন্য একটি কাঠের খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক থেকে আসা প্রতিনিধিদলটি নীলগাইটিকে ট্রাকে নিয়ে রওনা দিয়েছে।
গত বুধবার দুপুরের দিকে চাকলাহাট ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা প্রধান পাড়া এলাকায় ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের খেতে ছোটাছুটি করছিল নীলগাইটি। প্রথমে এটিকে কেউ হরিণ, আবার কেউ ঘোড়া ভেবে তাড়া করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে উৎসুক লোকজন বাড়তে থাকলে শতাধিক মানুষ প্রাণীটির পেছনে ছুটতে থাকেন। পরে প্রায় তিন কিলোমিটার দৌড়ে চাকলাহাট ইউনিয়নের পূর্ণ জয়ধরভাঙ্গা এলাকায় পাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয় প্রাণীটি। সেখানে ঘেরাও করে এটিকে ধরা হয়। তখন জানা যায়, প্রাণীটি নীলগাই।
এর মধ্যে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির সদস্যরা সেখানে গিয়ে নীলগাইটিকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গেলে তাঁদের হাতে নীলগাইটি তুলে দেয় বিজিবি। পরে বন বিভাগের কর্মীরা নীলগাইটিকে পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন। পরে প্রাণীটিকে বন বিভাগ কার্যালয়ে নিয়ে সেখানে স্টাফ কোয়ার্টারের একটি কক্ষে রেখে নেপিয়ার ঘাস, লালশাক, কাঁঠালপাতা, পানিসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ানো হচ্ছিল। তিন দিন ধরে নীলগাইটিকে ওই বদ্ধ কক্ষটিতেই পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছিল।
নীলগাইটি সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে এটি কানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে বলে ধারণা করছেন বন কর্মকর্তারা।
কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের টিমে একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক আছেন, তিনি দেখে জানিয়েছেন নীলগাইটি সুস্থ আছে, তবে শরীরে সামান্য আঁচড় রয়েছে। এখানে এসে আমি নিজে নীলগাইটিকে কলা খাইয়েছি। প্রাণীটিকে দেখে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এই স্ত্রী নীলগাইটিকে তার উপযুক্ত পরিবেশে রাখতে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নেওয়া হচ্ছে। তবে তার সঙ্গী হিসেবে রাখতে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে একটি পুরুষ নীলগাই নেওয়া হবে।’