খাল ভরাট করে সেতুর সংযোগ সড়ক, জলাবদ্ধ ৩৫০ একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ

শরীয়তপুরে কীর্তিনাশা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গিয়ে ভরাট হয়েছে খাল। এতে দীর্ঘদিন ধরেই পানি জমে আছে ফসলি জমিতে। নড়িয়ার গাগ্রীজোড়া এলাকায়। সম্প্রতি তোলাছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে প্রবহমান একটি খালের সংযোগস্থল ভরাট করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এতে উপজেলার নশাসন ইউনিয়নে অন্তত ৩৫০ একর জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। ইউনিয়নের গাগ্রীজোড়া ও পাড়াগাঁও মৌজার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই জমিতে কয়েক বছর বোরো ধানসহ কোনো ফসল আবাদ হচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও নশাসন ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত মোট ২৭ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নকাজ করছে সওজ। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সাল থেকে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত সদর উপজেলার কোটাপাড়া ও উত্তর প্রান্ত পড়েছে নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের গাগ্রীজোড়া এলাকায়।

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কটির পাশ দিয়ে নড়িয়া উপজেলার গ্রাগ্রীজোড়া এলাকায় কীর্তিনাশা নদী থেকে একটি খাল সদরের ভাস্করদি হয়ে আবার কীর্তিনাশায় মিশেছে। ওই খাল গাগ্রীজোড়া এলাকায় কীর্তিনাশা নদীর যে অংশ (সংযোগস্থল), তা বিআরএস ২৪৪ নম্বর ও ৬৭ নম্বর দাগে অবস্থিত। এর পাশেই ২৪৩ নম্বর দাগে সড়কটির অবস্থান। সওজ কীর্তিনাশা নদীর ওপর যে সেতু নির্মাণ করছে, সেটির সংযোগ সড়ক ওই দুটি দাগের ওপর নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণের কারণে খালটির ওপর অন্তত ২০০ মিটার অংশে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে গাগ্রীজোড়া ও পাড়াগাঁও মৌজার ৩৫০ একর জমিতে যে পানি জমেছিল, তা এখনো নামতে পারেনি। ফলে জলাবদ্ধতায় এসব এলাকায় বোরো ধানের আবাদ করতে পারেননি কৃষকেরা।

গতকাল গাগ্রীজোড়া ও পাড়াগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কীর্তিনাশা নদীতে সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। সেতু থেকে সড়কে ওঠা-নামা করার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণে খালের ওপর বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ওই স্থান দিয়ে নদী থেকে কোনো পানি খালে প্রবাহিত হচ্ছে না। আশপাশের ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে আছে। এসব জমিতে জমে আছে কচুরিপানা।

জলাবদ্ধ ফসলি জমি
ছবি: প্রথম আলো

গাগ্রীজোড়া এলাকার কৃষক হানিফ কাজী ৯০ শতাংশ জমিতে ধান ও পাটের আবাদ করতেন। চাষাবাদের মৌসুম না হলে তখন খালে মাছ শিকার করতেন। তিন বছর ধরে খালটিতে পানিপ্রবাহ বন্ধ। তিনি বিকল্প পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

গাগ্রীজোড়া ও পাড়াগাঁও এলাকায় ৪ একর জমি আছে কৃষক সিরাজ সরদারের। জলাবদ্ধতার কারণে তিনিও তিন বছর ধরে জমি ফেলে রেখেছেন। তাঁর ভাষ্য, সরকারের একটি দপ্তরের ঠিকাদার বালু ফেলে খাল ভরাট করেছেন। খাল দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ এলাকার তাঁর মতো অন্তত ৪০০ কৃষক কোনো ধরনের ফসল আবাদ করতে পারছেন না। নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ দখলমুক্ত না করা গেলে কৃষকেরা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

গ্রাগ্রীজোড়া এলাকার খালটি পুরোনো উল্লেখ করে নশাসন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, ‘আগে খালটি প্রবহমান ছিল। সেখানে নদীর সঙ্গে সংযোগস্থলে কিছু জমি বালু দিয়ে ভরাট করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সমস্যা সমাধানের জন্য পাউবো ও জেলা প্রশাসনকে জানাব। পাশাপাশি যাঁদের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলে এ সমস্যা উত্তরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, ‘সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য যে জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে, তা খাল ছিল। বিষয়টি নকশা করার সময় হয়তো খেয়াল করা হয়নি। যেহেতু ওই স্থানে খালের অস্তিত্ব আছে, তাই আমরা বিকল্প উপায় বের করে খালের প্রবাহ ঠিক রাখব। প্রয়োজনে ভরাট হওয়া খালের ওই অংশ সওজের উদ্যোগে খনন করে দেওয়া হবে।’