নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে জড়িত সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা, রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ

ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নারীবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আটক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাভার মডেল থানা-পুলিশ বাদী হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেছে। গতকাল আটক হলেও আজ দায়ের হওয়া মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার খালিদ মাহমুদ ওরফে হৃদয় (২১) সাভারের আমিনবাজারের হিজলা মধ্যপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার ভরতকাঠি এলাকায়। গতকাল সোমবার তাঁকে আটক করা হয়েছিল। হিজলা মধ্যপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকলেও বাসায় তিনি কম যেতেন বলে জানিয়েছেন খালিদ মাহমুদের প্রতিবেশীরা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সোমবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে আমিনবাজার পুলিশ ক্যাম্পে অবস্থানকালে ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল আলম তাঁর ফেসবুক আইডিতে খালিদ মাহমুদ হৃদয় খান নামের একটি আইডিতে করা পোস্ট দেখেন। পোস্টে ওই ব্যক্তি ছদ্মবেশ ধারণ করে রাস্তায় একজন নারীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাকে হিজাব পরলে কিন্তু সুন্দর লাগবে।’ এরপর ওই নারী নিজেকে হিন্দু বলে জানালে উত্তরে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘হিন্দু তাতে কী হয়েছে, এ জন্য কি মানুষকে দেখানো লাগবে বলো?’

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই ভিডিওর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করাসহ হিন্দু–মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, শত্রুতা, বিদ্বেষ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। পরে এসআই মো. ফয়সাল আলম অভিযান পরিচালনা করে মো. খালিদ মাহমুদ ওরফে হৃদয় খানকে পালানোর চেষ্টাকালে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমিনবাজারের হিজলা মধ্যপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আমিনবাজারে হৃদয়দের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার মূল দরজায় তালা ঝোলানো। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে হৃদয়ের বিষয়ে কথা হলে তাঁরা জানান, হৃদয় ওই বাসায় খুব বেশি থাকেন না। তাঁর মধ্যে খারাপ কিছু দেখেননি বলে জানান হৃদয়ের কয়েকজন প্রতিবেশী। তবে কিশোর বয়সী কয়েকজন হৃদয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বাসার অদূরে একটি মুঠোফোন মেরামত ও মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে পাওয়া যায় হৃদয়ের বাবা নূর ইসলামকে। এ দোকানের মালিক তিনি। নূর ইসলাম ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ছোটবেলায় পিরোজপুরে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে হৃদয়। এরপর সে আমিনবাজার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আগে সে গান-বাজনা নিয়ে থাকলেও ২০১৬ সালের পর থেকে তার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সে সঠিক পথে আছে।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর ২৪, ২৫, ২৭, ২৮ ও ৩১ ধারায় মো. খালিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সম্প্রতি মো. খালিদ মাহমুদের নারীবিদ্বেষী নানা কর্মকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সূত্র ধরে খালিদের আইডিতে থাকা বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি বিভিন্ন সময় মেয়েশিশু, কিশোরী ও নারীদের পথ আটকে নানা আপত্তিকর কথা বলেছেন। কী ধরনের পোশাক পরা উচিত, সে কথা বলেছেন। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ওই যুবককে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান অনেকে। এরপর গতকাল দুপুরে তাঁকে আটক করে সাভার মডেল থানা-পুলিশ।

আরও পড়ুন