রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে কক্ষে আটকে মারধরের পর চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগ নেতার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন-সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ কর্মসূচির আয়োজন করে অর্থনীতি বিভাগ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও একটি সংগঠন সংহতি জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাহিদ বাবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন, টিপু সুলতান, স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক মেহেদী সজীব প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা–পরবর্তীকালে হল খোলার পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আসন–বাণিজ্য শুরু করেন। হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাঁরা একের পর এক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছেন। এখন চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন তাঁরা। সর্বশেষ নির্যাতনের শিকার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। তাঁরা এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকে হল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। পাশাপাশি দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল থেকে সরিয়ে তদন্ত করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে হলেই রাখা হয়েছে। তাঁকে হলে রেখে তদন্তকাজ সুষ্ঠু হবে না। তাঁরা ইতিমধ্যে জেনেছেন, ছাত্রলীগ নেতা ওই শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে নানাভাবে বুঝিয়েছেন। তিনি চান না, তাঁরা কিছু করেন। একটি ছেলে ভয়ের বেড়াজাল ভেঙে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিল, সেখানে কীভাবে ছাত্রলীগ গেল? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিন্তু ভুক্তভোগীকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তাঁর যদি কোনো ক্ষতি হয়, সেই দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।
ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, গায়ে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ছাত্র উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দেন সামছুল। ছাত্র উপদেষ্টা তাঁকে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থী ট্রমার মধ্যে আছেন। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল, তাঁকে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া। প্রকাশ্যে একটি কক্ষে তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তারপরও তাঁকে হলেই রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, সামছুলের গলায় ছুরি ধরে পিটিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। এটা কোন মগের মুল্লুকে আছেন তাঁরা? এ ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া উচিত। দ্রুত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তদন্ত শেষে ওই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা জড়িত না বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন। তিনি ঘটনা–পরবর্তী সময়ে সামছুলের কক্ষে গিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তিনি ঘটাননি। আর সেখানেও যাননি। তিনি একাডেমিক কাজে একটু বাইরে আছেন।
গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কক্ষে আটকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। তিনি মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতেই ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ দেন। এরপর রাতেই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী সামছুল ইসলাম লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁকে কক্ষে ডেকে নিয়ে গলায় ছুরি ধরে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে তাঁর কাছে আরও টাকা দাবি করা হয়। তিনি বিষয়টি প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানাতে চাইলে তাঁকে রড ও স্টাম্প দিয়ে পেটায় ছাত্রলীগ নেতা ও তাঁর দুই সহযোগী। তাঁকে ছয়টার দিকে ছেড়ে দেওয়ার সময় ভাস্কর সাহা তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কাউকে বললে আবরারের যে অবস্থা হয়েছে, সেই অবস্থা হবে।’
এদিকে তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক সহকারী প্রক্টর এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার থেকেই মূলত তাঁদের তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আজ থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী ও বিবাদীকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
ওই ছাত্রলীগ নেতা ভুক্তভোগীর কক্ষে গিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, তাঁরা খোঁজ রাখছেন। এ খবরও পেয়েছেন। এটি তাঁরা নোট ডাউন করেছেন। ওই শিক্ষার্থীর আর কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারবেন না বলে তিনি জানান।