শরীয়তপুরে ধুতরাপাতা খেয়ে তিনজন অসুস্থ, এখনো জ্ঞান ফেরেনি
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ধুতরাপাতা খেয়ে একই পরিবারের তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার চর কুমারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অ্যালার্জির সমস্যার জন্য স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে তাঁরা ধুতরাপাতা সেদ্ধ করে ভাতের সঙ্গে খেয়েছিলেন বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন।
অসুস্থ হয়ে পড়া তিনজন হলেন ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চর কুমারিয়া গ্রামের মৃত নুরু খানের স্ত্রী বেলাতুন্নেসা (৬০), তাঁর ছেলে লিটন খান (৪০) ও লিটনের স্ত্রী লাকি আক্তার (৩৫)। অচেতন অবস্থায় তাঁদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের জ্ঞান ফেরেনি।
ধুতরাপাতায় একধরনের বিষ থাকে। খেলে মানবদেহে একধরনের বিষক্রিয়া তৈরি হয়। এতে মানুষ মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমরান সরদার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ হয়ে পড়া বেলাতুন্নেসাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের শরীরে সম্প্রতি অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় এক ব্যক্তির পরামর্শে ওই নারী ধুতরাপাতা সংগ্রহ করে শাকের মতো রান্না করেন। আজ দুপুরে পরিবারের সদস্যদের ভাতের সঙ্গে ধুতরাপাতা খেতে দেওয়া হয়। তিন শিশুসহ অসুস্থ তিনজন ধুতরাপাতা খান। খাওয়ার পরপরই তিন শিশু বমি করে ফেলে দেয়। কিছুক্ষণ পর ওই তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনেরা প্রথমে তাঁদের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অচেতন অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। রাত আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁদের চেতনা ফেরেনি।
বেলাতুন্নেসার ছেলে আবদুর রশিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদের অ্যালার্জির সমস্যা হয়েছিল। এলাকার কোনো এক ব্যক্তির পরামর্শে আমার মা ধুতরাপাতা শাকের মতো রান্না করে ভাতের সঙ্গে খেয়েছেন। এরপরই আমার মা, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। তিন শিশু খাওয়ার পরপরই বমি করে ফেলে দেওয়ায় তেমন সমস্যা হয়নি। দুপুরে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এখনো তাঁরা অচেতন অবস্থায় আছেন।’
সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে অচেতন অবস্থায় তিনজন রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়। স্বজনেরা জানিয়েছেন, ওই তিনজন ধুতরাপাতা খেয়েছেন। তাঁরা সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে তাঁদের আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য তাঁদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এমরান সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ধুতরাগাছের ফুল, কাণ্ড, পাতা সবই বিষাক্ত। ধুতরার বিষ মানবদেহে ঢুকলে নানা ধরনের সমস্যা হয়। বিষক্রিয়ায় মানুষ মারাও যেতে পারে। বিষের পরিমাণ কম হলে তিন-চার দিন পর্যন্ত অচেতন থাকতে পারে। কখনো কখনো মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।