অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীকে মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
জামালপুরের ইসলামপুরে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচপি) অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরের দিকে ইসলামপুর পৌরসভা কার্যালয়সংলগ্ন ওই ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ওই নেতার নাম নবী নেওয়াজ খান লোহানী ওরফে বিপুল। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি; ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়া বিএনপির ওই নেতার কয়েকটি ভিডিও আজ সোমবার সকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর নাম আশরাফুল ইসলাম। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী এলাকায়। আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মুঠোফোনে আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘আমাদের স্যারকে (অধ্যক্ষ) অপমান করা হয়েছিল। তখন আমি সেটার প্রতিবাদ করেছিলাম। প্রতিবাদ করার অপরাধে ওই নেতার অনুসারী রনির নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন আমাকে ক্যাম্পাস থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। আমাকে মেরেই ফেলত। তখন আবার ওই নেতাই আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। শুনেছি ওই নেতার সঙ্গে বিষয়টির সমাধান হয়েছে। কিন্তু আমাকে যে তারা মারছে, আমি সেটার বিচার চাই। তবে ওই নেতাকে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’
ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা ও শোনা যায়, নবী নেওয়াজ খানকে ঘিরে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীরা ওই নেতাকে বলছিলেন, ‘আপনি (নেতা) স্যারকে অপমান করেছেন, আমরা সেটা দেখেছি, তাই আমাদের সামনেই স্যারের কাছে সরি (ক্ষমা) বলতে হবে।’ তখন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ওই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা (শিক্ষার্থী) আমার ছেলের মতো, ইসলামপুরের মাটিতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি কইরো না। তোমরা (শিক্ষার্থী) আমার ছেলের মতোই থাকার চেষ্টা করো।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে যান।
ভিডিওর আরেকটি অংশে অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘উনি (ওই নেতা) যখন এখানে (ক্যাম্পাস) আসেন, তখন আমি হোস্টেল পরিদর্শন করছিলাম। আমাকে খবর দেওয়া হলে তাঁকে (নেতা) বসতে দিতে বলি। তবে আমার স্মরণ ছিল না যে আমার কক্ষটি তালা লাগানো। ফলে উনি (নেতা) বাইরে বসছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি (নেতা) একটু অসম্মানিত বোধ করেছেন। তাই তিনি ওখানেই (হোস্টেল) গিয়েই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি কিছু উচ্চবাচ্য কথাবার্তা বলেছেন। পরে যখন আমরা বসে কথা বলেছি। তখন উনি (নেতা) সবকিছু বুঝতে পেরেছেন এবং আমার কাছে ভুল স্বীকার করেছেন।’
এ বিষয়ে নেতা নবী নেওয়াজ খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি একদম মিথ্যা কথা। ওইখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি পক্ষের তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, ‘সেখানে আমি ওই নেতার সঙ্গে যাইনি। ওই ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিরা প্রবেশ করেন। ওই বিষয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’