রাজশাহী মেডিকেলে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, হটস্পট বাঘা ও চারঘাট
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বর্তমানে হাসপাতালের ১৪টি ওয়ার্ডে ১৭১ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া মেডিসিন ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গু কর্নার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪৩ জন স্থানীয়ভাবে (ঢাকাফেরত নয়) আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগীদের মধ্যে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাটের রোগীই বেশি। পুঠিয়া উপজেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই বাঘা ও চারঘাটে ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিলেন। বেশির ভাগই তখন ঢাকা বা অন্য কোনো শহরফেরত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। কয়েক দিন ধরে পুঠিয়া উপজেলাতেও আক্রান্ত বাড়ছে। সেখানে এডিসের লার্ভা মিলেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে আছেন নাসিমা বেগম (৩০)। ভর্তি হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে। গতকাল শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর আড়াই বছরের শিশু সিফাত বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইছে। বাবা মাজদার আলী মশারির ভেতর দিয়ে মায়ের কাছে দিলেন শিশুটিকে। মা ও ছেলে উভয়ই কান্না করছিল। ছেলে বেরই হতে চাইছিল না।
মাজদার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার পেটে ব্যথা আর জ্বর নিয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাসিমাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। তাঁর স্ত্রী কোথাও যাননি। তিনি বাড়িতে থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
চারঘাট উপজেলার নিমাই সাহা (৬০) গত মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেলের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর শয্যার পাশে বসে ছিলেন স্ত্রী বিজলী রানী সাহা। তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা ভালোই দিচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে থাকতে ভালো লাগছে না।
হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গু–বিষয়ক প্রতিবেদন দেওয়া হয়। গত কয়েক দিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে এক সপ্তাহ আগেও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন ১০০–এর নিচে। তবে এর পর থেকে রোগী বাড়তে থাকে। বর্তমানে হাসপাতালের ১০, ১৩, ১৪, ১৬, ২৪, ২৫, ৩০, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি আছেন ১৭১ জন। ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ জন।
হাসপাতালের পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়ার রোগী সবচেয়ে বেশি। ১৭১ জন রোগীর মধ্যে রাজশাহীর বাঘার সর্বোচ্চ ৩৭ জন, চারঘাটের ২৪ জন ও পুঠিয়ার ১৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই হাসপাতালে রাজশাহী বিভাগের বাইরে খুলনা বিভাগের রোগীও আছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। তাঁদের হাসপাতালে ১ হাজার ২০০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন প্রায় ৩ হাজার। প্রতিদিনই রাজশাহীর গ্রামাঞ্চল থেকে রোগীরা আসছেন। উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবীর বলেন, রাজশাহী মেডিকেলে সক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি আছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। তা না হলে রাজশাহী মেডিকেল এত রোগীর জায়গা দিতে পারবে না। এখন স্থানীয়ভাবে ব্যাপক রোগী শনাক্ত হচ্ছেন।