‘আইজ কম্বলখেনা গাত দিয়া সুন্দরমতো নিন পারিমু’

নতুন কম্বল হাতে পেয়ে খুশি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের এক বৃদ্ধা। আজ রোববার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

‘স্বামী মরি য্যায়া মোকো মারি গ্যাইছে। মুই বেটা-বউয়ের মাঝত থাকো। ব্যাটা রিসকা চালে খায়। গরিব মানুষ বাহে। মোর কোনো ন্যাপ-কাঁথা নাই। আইজ কম্বলখেনা গাত দিয়া সুন্দরমতো নিন পারিমু।’

কম্বল হাতে পেয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ৮০ বছর বয়সী আমেনা বেগম। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সহায়তায় ১৫০টি কম্বল শীতার্ত মানুষদের উপহার দেওয়া হয়। আজ রোববার দুপুরে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কম্বল বিতরণ করা হয়।

নীলফামারী প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সকালেই কম্বল হাতে পৌঁছে যান খাটুরিয়া স্কুলের মাঠে। এরপর মাঠে সমবেত হতে থাকেন শীতার্ত মানুষেরা। তাঁদের কেউ কেউ বর্ণিল কম্বলগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকেন। অনেকে আবার কম্বলের রং পছন্দ করে নেন।

সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী শামসুন্নাহার লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে আসেন। কম্বল পেয়ে উচ্ছ্বসিত বৃদ্ধা বলেন, ‘বাবা মোক খিব ভালো লাগেছে, মুই বিদুয়া মানুষ, বেটা বিয়া করি বেগল (আলাদা) থাকে। মুই থাকো বেটির সংসারত। সংসার চলে না। কম্বল কোনঠে পাইম। তোমার দেওয়া কম্বল পায়া খুব খুশি হছু বাহে।’

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায়তে শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দিচ্ছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সদস্যরা। আজ রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

দক্ষিণপাড়া গ্রামের পরিবানু (৮৫) বলেন, ‘মুই মাইনষের বাড়িত থাকো। মোর স্বামী–ছইল নাই। ছেঁড়া দাগলা (মোটা কাঁথা) গাত দিয়া জার যায় না। কম্বল খান দিয়া উপকার করলেন।’

নীলফামারী বন্ধুসভার সদস্যরা দুদিন ধরে ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া, ডাঙ্গাপাড়া, তেলিপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পূর্বপাড়া, দক্ষিণপাড়া গ্রামের দেড় শ দুস্থ মানুষকে খুঁজে বের করে স্লিপ দিয়ে আসেন। তাঁরাই খাটুরিয়া বিদ্যালয়ে সমবেত হন।

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী বন্ধুসভার সভাপতি রুবি আক্তার। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা মীর মাহামুদুল হাসান, ডোমার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আনিছুর রহমান, খাটুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম, বন্ধুসভার সহসভাপতি নিপুণ রায়, সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।