চকরিয়ায় অভিযানে গিয়ে ডাকাতের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারালেন সেনা কর্মকর্তা
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেনা কর্মকর্তার নাম মো. তানজিম সারোয়ার নির্জন (২৩)। তিনি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেফটেন্যান্ট তানজিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লেফটেন্যান্ট তানজিমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তিনি ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে ২০২২ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।
অভিযানে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে তিন ডাকাতকে আটক করেছে বলে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। পাশাপাশি দেশে তৈরি একটি বন্দুক, ছয়টি গুলিও উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, পূর্ব মাইজপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দিয়েছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল অভিযান চালায়। যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার এক ডাকাতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। তবে ওই ডাকাত তখন অতর্কিতে তানজিমের মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেনা কর্মকর্তা তানজিম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সেনাবাহিনীর অন্য সদস্যরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার এক ডাকাতকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন। তবে ওই ডাকাত তখন অতর্কিতে তানজিমের মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মাছ ব্যবসায়ী রেজাউলের বসতঘরে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর আগেই ফাঁস হয়ে যায়। এ কারণে স্থানীয় লোকজন সেনাক্যাম্পে রাতেই খবর দিয়ে রাখেন। যখন ডাকাত দল রেজাউলের বাড়িতে হানা দেয়, তখন স্থানীয় পূর্ব মাইজপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাতির খবর প্রচার করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী অভিযান চালালে সেখানে ছুরিকাঘাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম নিহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহ আলমের বসতঘরের উঠানে ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি ঘটে। জানতে চাইলে শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ডাকাত দলের সদস্যরা পূর্ব দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য তাদের পিছু নেন। পশ্চিম দিকে দুজন ডাকাত যেতে চাইলে তাদের একজনকে ধরে ফেলেন তানজিম সারোয়ার। এ সময় ওই ডাকাত তাঁকে মাথায় ও গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে অন্য সেনাসদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
নিহত সেনা কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সেনা কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সেনা কর্মকর্তা তানজিম সারোয়ার একাধিক ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন। তাঁর মরদেহ সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি চকরিয়া থানার পুলিশকে ডাকাত ধরতে চিরুনি অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন। চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিব উর রাজা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার (বন্দুক) উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাত গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে পুলিশ সুপার নির্দেশ দিয়েছেন।