কুড়িগ্রামে বন্যায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
ভারী বৃষ্টিপাত না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে। ধরলা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বাড়া অব্যাহত আছে। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির তীব্র স্রোতে প্রায় ২৬টি বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ মেট্রিক টন চাল ও ১০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এই সামান্য বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ, ধরলা, গঙ্গাধর ও তিস্তা নদীর পানি বেড়ে জেলার ২০টি ইউনিয়নের শতাধিক চর প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আর জেলা শিক্ষা দপ্তর থেকে জানা যায়, জেলার ৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার ৫৮ হাজার ৬৯০ জন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার্তদের জন্য নগদ অর্থ ও ত্রাণ পর্যাপ্ত রয়েছে। যেকোনো এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের খবর পেলেই সেখানে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার আইরমারীর চরের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কম করে হলেও দুই হাত পরিমাণে বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে চরের কয়েকটি বাড়ি স্রোতে ভেঙে গেছে। দুই দিন থেকে যে হারে পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়লে বড় বন্যা দেখা দেবে।
আজ সকালে জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর, ঘোগাদহ ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, হাতিয়া ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, অষ্টমীরচর, চিলমারী সদর ইউনিয়ন, রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী ইউনিয়ন, যাদুরচর ইউনিয়ন, রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাঠি, মোহনগঞ্জ ও রাজীবপুর সদর ইউনিয়ন, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন এবং ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী, বড়বাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুধকুমার নদের পানি বেড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া, বেরুবাড়ী ও বামণডাঙ্গা ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। হয়েছে চার শতাধিক বসতবাড়ি প্লাবিত। সাহেবের আলগা ইউনিয়নের সাত হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। চিলমারী উপজেলার নয়ারচর ইউনিয়ন, চিলমারী সদর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব পরিবারের জন্য চার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দুই মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
প্রথম আলো চরের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত মাসে দুধকুমার নদের ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় ঠাঁই নেন। আজ সকাল থেকে পাঠশালার মাঠেও পানি উঠতে শুরু করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আজ বিকেলের মধ্যে পাঠশালা ছাড়তে হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দীন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে ভাঙন ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলার ৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ৩৭টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যাক্রম সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। দুটি বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিস্তা নদীর ভাঙনে চর গুজিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিলীন হয়েছে। ১ নম্বর খামার দামার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ ভেঙে গেছে।