দেবীগঞ্জে চারটি কঙ্কাল উদ্ধার, দুই নারী গ্রেপ্তার

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক দুই নারী। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
ছবি : প্রথম আলো

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি বাড়ি থেকে মাথা, হাড়গোড় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা মানবদেহের চারটি কঙ্কাল উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় দুই নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাতে দেবীডুবা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় রিয়াজুল ইসলামের বাড়ি থেকে পলিথিনে মোড়ানো মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় এসব কঙ্কাল উদ্ধার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া নারীরা হলেন ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী কমলা বানু এবং ভুল্লিপাড়া এলাকার মো. রাজুর স্ত্রী নাসিমা বেগম।

এ ঘটনায় গতকাল রাতেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।

এ মামলার নামীয় আসামিরা হলেন দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার রিয়াজুল ইসলাম (৫০), তাঁর স্ত্রী কমলা বানু (৪০) এবং একই উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের ভুল্লিপাড়ার মো. রাজু (৪০) ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা বেগম (২৫)। তাঁদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম ও মো. রাজু পলাতক।

কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনায় আজ বেলা ১১টায় পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, সম্প্রতি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটছিল। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার ঝলঝলি পুকুরপাড়ের কবরস্থান থেকে সাতটি কঙ্কাল চুরি হয়েছিল। এ ঘটনায় গত ৭ সেপ্টেম্বর বোদা পৌরসভার সাতখামার এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (৫৬) বাদী হয়ে আটোয়ারী থানায় একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি তাঁর স্ত্রী, জামাই, বোনের লাশসহ সাতটি লাশের কঙ্কাল রাতের আঁধারে কবরস্থান থেকে চুরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তী সময় সেই মামলাটি দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৬ অক্টোবর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পরপরই তদন্তে নামে ডিবি।

ওই তদন্তের ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকার একজন ব্যক্তি দেবীগঞ্জের রিয়াজুল এবং রাজুর বাড়িতে মাঝেমধ্যে যাতায়াত করেন, যার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে কঙ্কাল চুরির মামলা রয়েছে। এর পর থেকেই ওই বাড়িতে গোয়েন্দার নজরদারি বাড়ানো হয়। গতকাল সন্ধ্যায় রিয়াজুলের বাড়িতে টাঙ্গাইলের ওই ব্যক্তি অবস্থান করছেন বলে জানতে পারে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি রিয়াজুল, রাজু ও তাঁদের স্ত্রীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছেন। তাঁরা তাঁদের স্ত্রীদের জানান ঘরের ট্রাঙ্কে, ট্রাভেল ব্যাগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে, তাঁরা যেন এসব জিনিস ভালোভাবে সংরক্ষণ করেন। এমন খবর পাওয়ার পরপরই দেবীগঞ্জ থানা–পুলিশের সহায়তায় ওই বাড়িতে অভিযান চালাতে যায় ডিবি। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আগেই সেখান থেকে টাঙ্গাইলের ব্যক্তিসহ রিয়াজুল ও রাজু মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যান। এরই মধ্যে রিয়াজুল ও রাজুর স্ত্রী ঘরের পাশে গোসলখানায় একটি গর্তে পলিথিনে মোড়ানো কিছু মানবদেহের কঙ্কাল পুঁতে রাখেন। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে চারটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় এবং কমলা বানু ও নাসিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, জব্দ করা এসব কঙ্কাল ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া কঙ্কাল চুরির পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।