ভৈরবে ইসকনের উপাসনালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা, ছাত্রলীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত একটি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে পৌর শহরের টিনপট্টি এলাকার নির্মল কর্মকারের ছেলে প্রণয় কর্মকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাণীবাজার হলুদপট্টিতে ‘শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ’ নামে ইসকন পরিচালিত একটি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আজ শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ভৈরবে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় আজ বিকেল পর্যন্ত নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন পৌর শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার হাসিবুল হাসান (২৮), মো. প্রান্ত ও পঞ্চবটি এলাকার মো. সানজিব। তাঁদের মধ্যে হাসিবুল পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সানজিব পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক এবং প্রান্ত উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও কিছু বিষয় বিবেচনায় রেখে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে থানা হেফাজতে গ্রেপ্তার তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, রাণীবাজার হলুদপট্টিতে ‘শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ’ নামে একটি মন্দির আছে। বাদী প্রণয় সংঘের একজন সদস্য। গত বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রণয়সহ কয়েকজন সদস্য মন্দির পরিচ্ছন্ন করতে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাজ শেষে তালা দিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে হামলার কথা শুনে মন্দিরে গিয়ে দেখেন, দরজা ও তালা ভাঙা। ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, মন্দিরে রক্ষিত ভগবানের ছয়টি ছবি, শঙ্খ, আচমনপাত্র, মৃদঙ্গ, সোফা, চেয়ার, টেবিল, ঘড়ি ও ঠাকুরের সিংহাসনে ভাঙচুর করা হয়েছে। সবই মাটিতে পড়ে আছে। মন্দিরের বাক্সে রক্ষিত ঘণ্টা, কাঁসি, করতাল, ঝম্প চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয় এজাহারে।
বাদী প্রণয় কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ইসকনের অনেকগুলো শাখা সংঘ আছে। শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ হলো ইসকনের প্রচার শাখা। ভৈরবে সংঘটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। এখানে মন্দিরের কার্যক্রমও চলে। সপ্তাহের রোববার নিয়মিত প্রার্থনা হয়। ইসকন নরসিংদী শাখা থেকে ভৈরবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাণীবাজার হলুদপট্টিতে এক ব্যবসায়ীর একতলা ভবনে ওই সংঘের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংঘে প্রতি রোববার প্রার্থনা ও কীর্তন হয়। এ ছাড়া অন্য দিনে সংঘের কার্যালয় খুব একটা খোলা হয় না। গতকালও বন্ধ ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে কয়েকজন এসে ‘ভৈরবে ইসকনের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের প্রায় সবার হাতে লাঠি ছিল। পরে ভাঙচুর করে চলে যায়। হামলাকারীদের বেশির ভাগই তরুণ। সংখ্যায় ১৫ থেকে ২০ জন ছিল।
ওই ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন, থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ইউএনও শবনম শারমিন বলেন, ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তিনি বলেন, এখন তাঁরা ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনবেন।