বাঁধগুলো খোলার বিষয় ভারত চাইলেই আগেই জানাতে পারত: রিজওয়ানা হাসান

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর ভেঙে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন শেষে কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানছবি: প্রথম আলো

ভারত তাদের বাঁধের দরজাগুলো খোলার আগে বিষয়টি চাইলে বাংলাদেশকে আগেই জানাতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর ভেঙে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন তিনি।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাঁধের দরজা খোলার আগে ভারত বাংলাদেশকে বিষয়টি জানতে পারত। তারা প্রয়োজনে আমাদের এটা বলত—এখানে বৃষ্টিপাত বাড়ছে, কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের বাঁধের দরজাগুলো খুলে দেব বা খুলে যাবে। তোমরা প্রস্তুতি নাও। অন্তত এটুকু জানাতে তো কারও কোনো আপত্তি থাকার কারণ নেই। বিষয়টি আগে জানতে পারলে আমরা কিছুটা হলেও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেতাম। আমরা এত দিন ক্ষয়ক্ষতির হিসাবের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন ক্ষতির হিসাব হয়ে গেছে। এখন অবশ্যই আমরা ভারতের সঙ্গে বিষয়টি তুলব।’

২২ আগস্ট রাতে হঠাৎ গোমতী নদীর পানি বেড়ে বুড়বুড়িয়ায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তলিয়ে গিয়েছিল বুড়িচংসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা। এরপর থেকেই স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাঁধের পাল্টা বাঁধ মানুষের মনের ক্ষোভের কথা। বাঁধের পাল্টা বাঁধ দেওয়া প্রযুক্তিগতভাবেও ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা করব নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে। যেমন একটি নদী নেপালে সৃষ্টি হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এল, এটা দ্বিপক্ষীয় না রেখে বহুপক্ষীয় হতে হবে। একটি নদীকে একটি অস্তিত্ব ধরে আমরা কাজ করতে চাই। সেটি যদি সময়সাপেক্ষও হয়। আর এখানে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ব্যাপারও আছে; কিন্তু সবকিছুর মূলকথা হলো আমার দেশের তিস্তাপাড়ের মানুষ কত দিন আর বসে থাকবে। আমরা অবশ্যই তিস্তাপাড়ের মানুষের কথা শুনে, গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদী পাড়ের মানুষের কথা শুনে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করব।’

গোমতী নদীর পাড় দখল ও স্থাপন নির্মাণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা ভ্রান্ত একটি উন্নয়ন দর্শনের মধ্যে রয়েছি। আমরা মনে করি, বিল্ডিং হলেই উন্নয়ন হয়েছে। নদীর ওপর স্থাপনা করার কারও আইনগত কোনো অধিকার নেই। ঢাকার বুড়িগঙ্গায়ও দুই হাজারের বেশি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখানেও নদীর ওপর গড়ে ওঠা স্থাপনা ভাঙতে চাইলেই ভেঙে ফেলা যাবে।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদীর উপর স্থাপনা করার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারেরও নেই। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নদী দখল করেছে অনেক স্থানে। নদী রক্ষা কমিশনের একটি তালিকা রয়েছে ৬৬ হাজার দখলদারের। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দুই মাসের মধ্যে দেশের সকল নদ-নদী থেকে কীভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে তার কর্ম পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য।

এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওলিউজ্জামান, বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তারসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।