সাক্ষীর দাবি, এক হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে, পুলিশ বলছে ২০টি
মাদকের একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে এসে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন, মামলাটির আসামির কাছ থেকে পুলিশ এক হাজার ইয়াবা ও ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। কিন্তু ওই মামলার বাদী পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য, জব্দ করা ইয়াবার সংখ্যা ২০, ফেনসিডিল ৭০ বোতল। রায় লেখার সময় বিষয়টি আদালতের পর্যবেক্ষণে এলে ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গত বৃহস্পতিবার নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ নির্দেশনা দেন। গতকাল শনিবার ঘটনাটি আলোচনায় আসে।
মামলার রায়ে আসামি নুরজাহান বেগমকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলাটির আরেক আসামি জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্য আদালতে এখনো বিচার চলছে।
নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক উপপরিদর্শক কৃষ্ণ মোহন সরকার ২০১৭ সালে সদর থানায় নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি লেখেন, আসামি নুরজাহানের কাছ থেকে ২০ ইয়াবা এবং জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে ৭০টি ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রেও একই তথ্য দেন।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে সাক্ষী হিসেবে হাজির হন সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। তিনি আদালতে বলেন, ঘটনার দিন তিনিসহ অন্য সাক্ষীরা উপপরিদর্শক কৃষ্ণ মোহন সরকারকে আসামি নুরজাহানের কাছ থেকে এক হাজার ইয়াবা ও আসামি জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করতে দেখেছেন। অথচ ওই উপপরিদর্শক কৌশলে জব্দ তালিকায় উদ্ধার হওয়া মাদকের পরিমাণ কমিয়ে মাত্র ২০ ইয়াবা ও ৭০ বোতল ফেনসিডিলের তথ্য লিখেছেন, যা সত্য নয়।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যের বিষয়টি গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তোফাজ্জল হোসেন নিজেই। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে তাঁর সামনে ছাতনী ইউনিয়নের মাঝদিঘা স্কুলপাড়ায় এসব মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।
উপপরিদর্শক কৃষ্ণœমোহন সরকার বর্তমানে সিরাজগঞ্জ আদালতে কর্মরত। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষী তোফাজ্জল হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি নাটোরে কর্মরত থাকাকালে তোফাজ্জল নানা বিষয়ে তদবির নিয়ে আসতেন। এসব তদবিরে সাড়া না দেওয়ায় আক্রোশ থেকে আদালতে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি। আদালতের বা পুলিশ সুপারের কোনো আদেশ তিনি পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর হাতে এমন কোনো কাগজ আসেনি।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে আদালতের বিচারক সাক্ষী তোফাজ্জল হোসেনের দেওয়া সাক্ষ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নাটোরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেটিও আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।