ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি হাতে গোনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আজ রোববার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এরপরের দুই ঘণ্টায় ১০টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। ফাঁকা কেন্দ্রে দু-একজন করে আসছেন আর ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ১ ফেব্রুয়ারি এ শূন্য আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। আসনটিতে আজ আবার উপনির্বাচন চলছে। এবার এখানে ভোট গ্রহণ হচ্ছে ব্যালটের মাধ্যমে।
নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম, জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা (কলার ছড়ি)।
সরেজমিনে আজ সকাল ৯টায় সরাইল উপজেলা সদরের পশ্চিম কুট্টাপাড়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, সেখানে মোট ভোটার ৪ হাজার ৮১৮ জন। ১০টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। সেখানে এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৪০টি।
সরাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ২০৮ জন। এখানে সকাল সাড়ে ১০টায় ভোট পড়েছে ১৪২টি। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম মিলনায়তন ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ২৬২ জন। সকাল পৌনে ১১টায় ভোট পড়েছে মাত্র ১৩১টি।
আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কেবি উচ্চবিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে গিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে মোট ভোটার ৪৮৮। কিন্তু দুই ঘণ্টায় এ কক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র দুটি। আর পুরো কেন্দ্রে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে প্রায় ২ শতাংশ (১ দশমিক ৭৪ শতাংশ)।
আড়াইসিধা কে বি উচ্চবিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুই ঘণ্টায় ৫২ ভোট পড়েছে। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৯৮৩।
সকাল ৯টায় আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া শালুকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও ভোটারদের তেমন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এই কেন্দ্রের ৬টি বুথে ৩ হাজার ১৩৮ ভোটের মধ্যে পড়েছে মাত্র ৪৬টি ভোট, যা মোট ভোটারসংখ্যার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
খোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ৪ হাজার ৩৯৬। চারটি বুথে দেড় ঘণ্টায় চারটি বুথে পড়েছে ৫২টি ভোট, যা মোট ভোটের ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। দগিরাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রবিউল আউয়াল সরকার বলেন, ৩ হাজার ২৯০ ভোটার রয়েছেন। এক ঘণ্টায় পড়েছে ৪৫টি ভোট, যা মোট ভোটের ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রেও বেলা ১১টায় গিয়ে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে পুরুষ ভোটকেন্দ্রের ভোটকক্ষে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের জটলা দেখা যায়। ভোটকক্ষের ভেতরে সাংবাদিকদের ঢুকতে বাধা দেন মো. হৃদয় নামের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এক সমর্থক। একপর্যায়ে অন্য সমর্থকেরাও তাঁর পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে সরাইল উপজেলার কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোটার তালিকায় গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের ভেতরে রাখা তালিকার সঙ্গে প্রার্থীর এজেন্টদের তালিকার মিল খুজে পাচ্ছেন না ভোটাররা। সৈয়দটুলা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট দিতে এসে লোকজন ফিরে যাচ্ছেন। কারণ, কেন্দ্রের ভেতরের তালিকার সঙ্গে বাইরের তালিকার মিল নেই।’
জাতীয় পার্টির সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভোটকেন্দ্র হচ্ছে কালীকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়। এ কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক নারী ভোট না দিয়ে ফিরে গেছেন। ভোটার তালিকার গরমিলের কারণে এমনটি হয়েছে। বিষয়টি আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রে জোর করে ভোট নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এমনটি হলে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি কেমন করে!’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগ প্রার্থীরা করেছেন। এ জন্য সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমরা নতুন করে তালিকা সরবরাহ করেছি। আমরা প্রার্থীদের যে তালিকা দিয়েছিলাম, তাঁরা হয়তো সেটি প্রিন্ট করেননি। এ জন্য এমনটি হতে পারে।’