সুন্দরবন সুরক্ষায় কাজ করে ‘পল কে ফেয়ারাবেন্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বনজীবী খয়বার সরদার
বিশ্বব্যাপী কঠিন পরিস্থিতিতে জনসমাজ এবং তাদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধিতে অবদান রাখা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে দেওয়া হয় সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক মর্যাদাপূর্ণ ‘পল কে ফেয়ারাবেন্ড অ্যাওয়ার্ড’। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবীদের মধ্যে বনজসম্পদের পরিকল্পিত সংরক্ষণের কৌশল ছড়িয়ে দেওয়ায় সম্প্রতি এ পুরস্কার জিতেছেন খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা বনজীবী খয়বার সরদার (৭৮)।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কয়রার আমাদী ইউনিয়নের নাকশা গ্রামে খয়বার সরদারকে সংবর্ধনার আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’। এ সময় তাঁর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাওয়ার্ডের একটি সনদ ও আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খয়বার সরদার প্রবীণ বনজীবী। তিনি ২০১১ সাল থেকে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় তিনটি বনজীবী সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে ৩৫০টি বনজীবী পরিবার সম্পৃক্ত রয়েছে। ওই সমিতিগুলো স্থানীয় নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার বুঝে নিতে এবং টেকসই জীবিকা খুঁজতে সচেতনতামূলক কাজ করে। এ ছাড়া তিনি সুন্দরবনের সম্পদ আহরণকারী হিসেবে একটি সমন্বিত ম্যানগ্রোভ একুয়া-সিলভিকালচার সিস্টেম বিকাশ করেছেন। তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণ করেও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে টেকসই জীবিকা নিশ্চিত সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙনের মতো জলবায়ুর প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করেছেন তিনি।
পল কে ফেয়ারাবেন্ড অ্যাওয়ার্ড জেতা প্রসঙ্গে খয়বার সরদার বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাগের দায়িত্ব আরও বাড়াই দিছে। সুন্দরবনকে ভালো রাখতি আমরা সবাই মিলে আরও বেশি চেষ্টা করব। আমরা কয়েক বছর ধইরে বনের মাছ, গাছ, পশুপাখি রক্ষার বিষয় নিয়ে কাজ করতিছি। মৌয়ালরা যেন মধু কাটতি যাইয়ে মৌমাছি না মারে, জেলেরা যেন মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বনের ক্ষতি না করে, সেসব বিষয়ে সমাজের সবাইরে নিয়ে চেষ্টা করতিছি। আমার আজকের এই পুরস্কার শুধু আমার একার না। আমাদের তিনটি সমিতির সব সদস্যের। আমরা সবাই উৎসাহিত হইছি। সামনে সবাই মিলে আরও ভালোভাবে কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’–এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। সুন্দরবনের আশপাশের মানুষেরা সংগ্রামের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। তবে ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে দিন দিন কঠিন করে তুলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় খয়বার সরদারের পরিশ্রম স্থানীয় বনজীবীদের সুন্দরবনকে ভালো রেখে জীবিকা গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। তিনি শুধু নিজের নয়, বরং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নেও সহায়তা করেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবেই তাঁর এ পুরস্কার প্রাপ্তি।’