সিলেট নগরে চার কারণে যানজট, ভোগান্তি
নগরের অন্তত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড আছে। নেই ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ। অসহনীয় যানজট হচ্ছে।
সড়কে যানবাহন চলাচলে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলাসহ চারটি কারণে সিলেট শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে শহরের কয়েক লাখ মানুষ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূল সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ড বসিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, ফুটপাত বেদখল, অধিকাংশ বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা এবং সরু রাস্তা—এ চার কারণে সিলেট নগরের বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। এতে ঘর থেকে বেরোলেই নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকায় কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহমেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি শাহী ঈদগাহ এলাকা থেকে যাচ্ছিলেন ফাজিল চিশত এলাকায়। এরই মধ্যে দুই দফা যানজটের কবলে পড়েছেন।
অনেকে রাস্তার মধ্যে পার্কিং করছেন। এ ছাড়া ফুটপাত বেদখল ও সড়কে অস্থায়ী স্ট্যান্ড বসানোও যানজটের অন্যতম কারণ।অনাদি মজুমদার, সিলেট নগরের বাসিন্দা
ক্ষোভ নিয়ে আহমেদুল বলেন, ‘সকাল, দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় সব সময়ই যানজট থাকে। আম্বরখানা এলাকা এর মধ্যে একটি। এই এলাকায় প্রধানত দুই কারণে যানজট হয়। এগুলো হচ্ছে রাস্তায় সিএনজি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো এবং ফুটপাত বেদখল হওয়া।’
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বারুতখানা, জেল রোড, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, তালতলা, সুরমা মার্কেট, রিকাবীবাজার, নাইওরপুল, সোবহানীঘাট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, উপশহর মোড়, কালীঘাট, লালদীঘিরপাড়, মহাজনপট্টি ও হুমায়ূন রশিদ চত্বর এলাকায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় আটজন ভুক্তভোগী বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি যানজট থাকে। দিনের বেলাও অনেক সময় কালীঘাট এলাকায় মালবাহী ট্রাক ঢুকে পড়ছে। এতে ওই এলাকার যানজট প্রকট আকার ধারণ করছে।
বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সড়কে যানজট দেখা যায়। ওই সড়কের একাংশ দখল করে হকারেরা মাছ, সবজি, ফল, পোশাক বিক্রি করছেন। মদিনা মার্কেট-বাগবাড়ীমুখী সড়কের পাশে অস্থায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড বসানোয় মূল সড়কটি অনেকটা সরু হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এ কারণেই এ সড়কে যানজট হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মদিনা মার্কেট এলাকায় বাজার করতে আসা চল্লিশোর্ধ্ব অনাদি মজুমদার বলেন, মদিনা মার্কেট এলাকায় আগে এতটা যানজট ছিল না। দুই বছর ধরে এখানে যানজট বেড়েছে। এই সড়কে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতান আছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং নেই। এতে অনেকে রাস্তার মধ্যে পার্কিং করছেন। এ ছাড়া ফুটপাত বেদখল ও সড়কে অস্থায়ী স্ট্যান্ড বসানোও যানজটের অন্যতম কারণ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার তথ্য অনুযায়ী, নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকারদের ব্যবসা পরিচালনা এবং যত্রতত্র অস্থায়ী সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড বসানোর কারণেই যানজট হচ্ছে। এর বাইরে মূল কারণ হচ্ছে, অনেক বিপণিবিতান এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং নেই। পাশাপাশি সরু রাস্তাও যানজটের আরেকটি কারণ।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বরাদ্দের অভাবে অনেক সরু রাস্তা প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। তবে যেসব বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পার্কিং নেই, সেসব তালিকা করে কার্যকর কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, তা ভাবা হচ্ছে। আর ফুটপাত ও অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করে থাকে।
বন্দরবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা ও উপশহর এলাকার ছয়জন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, একদিকে অভিযান হলে কিছুক্ষণ পরই ফের হকারেরা রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসছেন। নগরের অন্তত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড আছে, সেসব উচ্ছেদে ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই।
যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগরের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে। আগে এলোমেলোভাবে নগরে গণপরিবহন চলত, গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলতে দেওয়া হয় না, সেসব যানবাহন শুধু পাড়া-মহল্লায় চলাচল করে। এতে যানজট কমেছে।
হকার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় জানিয়ে উপপুলিশ কমিশনার বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে সবকিছুই একটা নিয়মের মধ্যে আনা হচ্ছে।