ফরিদপুরে যুবলীগ-পুলিশের হামলায় পণ্ড বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচি, আহত ৩৫
ফরিদপুরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় বিএনপির গণ–অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। আজ বুধবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে এ ঘটনা ঘটে। এতে ৫ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন ৩৫ জন। ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় তাদের সমাবেশ পণ্ড হয়েছে। তবে পুলিশ বলেছে, বিএনপির কর্মীরা তাদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছেন। আত্মরক্ষার জন্য তারাও রাবার বুলেট ছুড়েছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া প্রথম অলোকে বলেন, হামলায় বিএনপির ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম জলিল বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ১০ জনকে।
এর আগে বেলা ১১টায় শহরের ঐতিহাসিক অম্বিকা ময়দানে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে গণ–অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা অম্বিকা ময়দানের পাশ দিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে কাঠের লাঠি দেখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা থেকে পৌর ভূমি অফিসের পাশ দিয়ে অবস্থান কর্মসূচিস্থলের মাঠের প্রবেশফটকে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়ে ও লাঠি নিয়ে তাঁদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। এ সময় মাঠের পূর্ব দিকে অবস্থান নেওয়া পুলিশের ওপর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশও রাবার বুলেট ছোড়ে। যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় একপর্যায়ে গণ–অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা রাসেল স্কয়ারে সমাবেশ করছিলাম। এ সময় খবর পাই, বিএনপির বড় একটি মিছিলের কারণে গোয়ালচামট শ্রীঅঙ্গণ থেকে আলীপুর গোরস্থান পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, জনতার ভোগান্তি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। আওয়ামী লীগের কেউ কোনো বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, বিএনপির নিজেদের মধ্যে বিরোধ ছিল। পাশাপাশি বিএনপির প্রতিপক্ষ দল সক্রিয় ছিল। গণ–অবস্থান কর্মসূচি করার কথা ছিল, কিন্তু মিছিল করার কথা ছিল না। একটি বড় মিছিল সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সামনে দিয়ে গণ–অবস্থান কর্মসূচিস্থলে আসার পথে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিলকারী নেতা–কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ ১৬টি রাবার বুলেট ছোড়ে। পরে গণ–অবস্থানের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা অম্বিকা ময়দানের পাশ দিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে কাঠের লাঠি দেখা যায়।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরকারি দলের সমর্থকেরা হামলা চালালে তাঁদের প্রতিহত করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করেন। এতে বিএনপির অনেকে আহত হয়েছেন।
গণ–অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হওয়ার পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি করছি, তখন আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারা কেন মহড়া দিল। আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিপদে ফেলার জন্য চতুর দিকে ঘেরা অম্বিকা ময়দানে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়।’