উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে রাতভর মর্টার শেল ও গুলির শব্দ, আতঙ্কে মানুষ

নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যফাইল ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে দুই দিন পরে আবারও থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল রোববার রাত ১০টা থেকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

পালংখালী, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্ত। গত দুই দিন শনি ও রোববার এই সীমান্তে কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি। গতকাল রাত থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন, হোয়াইক্যং ইউপির চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্ণীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও সাবরাং ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম।

আরও পড়ুন

কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গত বছর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) লড়াই চলছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন; যদিও গোলাগুলি হলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন বলেন, বালুখালী, পালংখালী ও আনজুমানপাড়ার বিপরীতে ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে প্রচুর গোলাগুলি হয়েছে। তবে সীমান্তে কয়েক শতাধিক লোককে জড়ো হতে দেখা গেলেও গোলাগুলি থামার পর রাখাইনের গ্রামের দিকে চলে গেছেন।

হোয়াইক্যং উলুবনিয়ার বাসিন্দা জালাল আহমদ বলেন, থেমে থেকে গোলাগুলিতে ঘুমানো যাচ্ছে না। গোলাগুলির কারণে কেউ অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
হ্নীলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, টেকনাফ সীমান্তে শনি ও রোববার কোনো ধরনের শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে রোববার রাত থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের জামবনিয়া, রাইম্মবিল, পেরাংপুরু ও কাইনবন্যা এলাকায় থেমে থেমে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, মিয়ানমারের সীমান্তে অর্ধশতাধিক মর্টার শেল ও কয়েক হাজারের বেশি গুলি ছোড়া হয়েছে। এতে সীমান্তের এপারে বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন

সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল আলম বলেন, মর্টার শেল ও গোলাগুলি নিক্ষেপের কারণে সারা রাত সীমান্তের এপারের বাড়িঘরগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এসব শব্দ শুনে ছোট ছেলেমেয়েরা ভয়ে কান্নাকাটি করছে।
সাবরাং ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, শাহপরীর দ্বীপের বিপরীতে রাখাইনের গেদুছড়া ও মেগিচং এলাকায় রাত থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া গেছে।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে মর্টার ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে টেকনাফ সীমান্তে কড়া নজরদারি পাশাপাশি বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত অতিক্রম করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত। সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন