‘মাদকগ্রহণকারী কখনোই প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না’
মাদকদ্রব্য উৎপাদন বন্ধ করা হয় না কেন? মাদক আসে কোথা থেকে? সরকার এসব বন্ধ করে না কেন? আমার বন্ধু সিগারেট খায়, নিষেধ করলেও শুনছে না, এটা বন্ধ করতে আমি কী করতে পারি? আমার বাবা মাদক সেবন করে, মা বাধা দিলে উল্টো মাকেই মারধর করে, এখানে আমার কী করার আছে? খুদে শিক্ষার্থীদের এমন নানা কৌতূহলী প্রশ্ন উঠে আসে মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায়। উপস্থিত আলোচকেরাও শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাব দেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ওই মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সভার আয়োজন করেছে দিনাজপুর প্রথম আলো বন্ধুসভা। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই সভায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। সভাটি সঞ্চালনা করেন ফুলবাড়ী বি এম কলেজের প্রভাষক হারুণ অর রশিদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম। আলোচক হিসেবে ছিলেন দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহাকারী অধ্যাপক জলধি নাথ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মমিনুল করিম, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহ-নেওয়াজ, ভাবনা (মাদকাসক্তি নিরাময় ও পরামর্শ কেন্দ্র) এর নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, প্রথম আলোর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম, জাগো নিউজ ২৪-এর প্রতিনিধি এমদাদুল হক প্রমুখ।
সভায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মমিনুল করিম বলেন, মাদকে আসক্তির ফলে ধীরে ধীরে একটি সম্ভাবনাময় জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। উঠতি বয়সের তরুণেরা, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মেয়েরাও কৌতূহলবশত বা ঠুনকো কারণে মাদকের ছোবলে জড়িয়ে পড়ছেন। নিয়মিত খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এর থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আইন প্রয়োগ করে নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সচেতনতা ও শক্ত মনোবল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, যে মাদক সেবন করে এবং মাদক সেবনে অন্যকে উৎসাহ দেয়, সে কখনোই অপর একজনের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্তানের সামনে বা ছোট শিশুর সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কম বয়সে যদি কেউ আসক্ত হয়ে পড়ে, তাকে হেয় করা যাবে না; বরং মাদকের কুফল সম্পর্কে তাকে অবগত করা এবং জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার পরামর্শ দিতে হবে।
সাময়িক আনন্দ লাভের জন্য বা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়নি বা পরিবারে বাবা-মায়ের ঝগড়া-বিবাদ—এসব থেকেই মাদকের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। প্রথমে এটা মানসিক চাহিদা তৈরি করে। তারপর শারীরিক চাহিদার দিকে ঝুঁকতে থাকে এবং একপর্যায়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের বর্ণনা দিয়ে প্রতিটির কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানান তিনি। তিনি বলেন, সুচিকিৎসা ও ভালোবাসার মাধ্যমে যে কাউকে মাদক থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
সঞ্চালক হারুণ অর রশিদ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মিথ্যা-মাদক-মুখস্থ—এই তিন বিষয়কে ‘না’, এমন শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে খাতা, কলম ও স্কেল দেওয়া হয়।