আমার ছেলেকে মাফ করে দিয়েন: নিহত সাইফুলের বাবা
বেলা তিনটার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির ফারাঙ্গার নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় আইনজীবী সাইফুল ইসলামের লাশ। এ সময় তাঁর গ্রামের বাড়িতে তৈরি হয় হৃদয়বিদারক পরিবেশ। সাইফুলের মৃত্যু নিয়ে আহাজারি করতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে আসা আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গ্রামের বাড়িতে সাইফুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বিকেল পৌনে পাঁচটায়। এতে হাজারো মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. ইনামুল হাছান, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস প্রমুখ।
জানাজায় ছেলের জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানাজায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমার ছেলেকে মাফ করে দিয়েন এবং তার জন্য দোয়া করবেন।’ এ সময় তিনি সরকারের কাছে তাঁর ছেলে হত্যার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম একজন মেধাবী আইনজীবী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সবাই শোকাহত ও বাক্রুদ্ধ। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আইনজীবীরা কর্মবিরতিসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসবে। আপনারা উত্তেজিত হবেন না।’
জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। আপনারা কেউ উত্তেজিত হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবেন না। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন।’
জানাজা শেষে সাইফুলের লাশ তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সাইফুলের গ্রামের বাড়িতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তাঁরা সাইফুলের কবর জিয়ারত করেন। নিহত সাইফুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সান্ত্বনাও দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই নেতা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল-সংলগ্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) ছিলেন।
আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরে নিহত সাইফুল ইসলামের দুটি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা আড়াইটায় তাঁর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় লোহাগাড়া শাহপীর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। এরপর লাশ সেখান থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাঁর গ্রামের বাড়ি চুনতি ফারাঙ্গা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ জানাজা।