‘বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি’ বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান হাফিজুল ইসলাম। কিন্তু আর বাসায় ফেরেননি। মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে স্বামীকে খুঁজতে যান আকলিমা আক্তার; খুঁজে পান তাঁর রক্তমাখা শার্ট ও গেঞ্জি। আকলিমার আশঙ্কা হয়, স্বামীর সঙ্গে ভয়ানক কিছু ঘটেছে। কিন্তু হাফিজুল কোথায়, তা কেউ বলতে পারছিলেন না। শেষে হাসপাতালে মেলে তাঁর নিথর মরদেহ; যার শরীরজুড়ে ছররা গুলির রক্তাক্ত ক্ষত।
হাফিজুল ইসলাম (২৫) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাঁও গ্রামের মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ ছিলেন। নাওগাঁও ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের আকলিমা আক্তারকে বিয়ে করেন ২০১৭ সালে। এ দম্পতির সুমাইয়া আক্তার (৪) নামের একটি মেয়ে রয়েছে।
স্বজনেরা জানায়, গাজীপুরের শফিপুর আনসার একাডেমি এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন হাফিজুল। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে থাকতেন বিশ্বাসপাড়া এলাকায়। গত ৪ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে ওই বাসা থেকে বের হন হাফিজুল। স্ত্রীকে জানান, বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন। হাফিজুলের সঙ্গে বাসার আশপাশের আরও কয়েকজন-ও বেরিয়ে যান। তাঁরা সবাই সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় ফিরলেও হাফিজুল ফিরছিলেন না।
আকলিমা আক্তার বলেন, হাফিজুলের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পেয়ে বাইরে বের হন তিনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বলাবলি করছিলেন, বিশ্বাসপাড়ায় গোলাগুলি হয়েছে। এতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ভয় আর আশঙ্কা নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আকলিমা। সেখানে গিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় স্বামীর রক্তমাখা শার্ট ও গেঞ্জি খুঁজে পান। রক্তাক্ত কাপড়টি নিয়ে কাঁদতে থাকেন। একপর্যায়ে মনে সাহস সঞ্চয় করে আবারও স্বামীকে খুঁজতে থাকেন।
আকলিমা আরও বলেন, ‘স্বামীকে না পেয়ে তাঁর ছবি ও ঠিকানা দিয়ে এক স্বজনকে পাঠান টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে। ৫ আগস্ট রাত ৯টার দিকে হাসপাতালটির গিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ করেও (হাফিজুলকে) পাওয়া যায়নি। পরে মর্গে খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর লাশ। গুলিতে আমার স্বামীর পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল।’
স্বামীর এমন মৃত্যুতে এখন দিশাহারা অবস্থায় আছেন আকলিমা। তিনি চান, এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক। গত ৬ আগস্ট নিজ বাড়িতে হাফিজুলকে দাফন করা হয়েছে জানিয়ে আকলিমা বলেন, ‘আমাকে বিধবা ও আমার মেয়েকে এতিম করে দেওয়া হয়েছে। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। মেয়ে বাবার জন্য বারবার কান্নাকাটি করে। যখন বেশি কাঁদে, তখন কবরের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতাম। সেখানে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য দোয়া করে মেয়ে।’