নানা শঙ্কার মধ্যেই বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে
নানা শঙ্কার মধ্যেই বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও ৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত। এ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ৬ জন এবং বগুড়া-৬ আসনে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং বগুড়া পৌরসভা নিয়ে বগুড়া-৬ আসন। বগুড়া-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩। ১৪৩ ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১৭টি বুথে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছে। ভোট গ্রহণের জন্য ১৪৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ১৭ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং ২ হাজার ৩৪ জন পোলিং কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ আসনে ৭৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণে ১ হাজার ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। মোতায়েন আছে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটও মাঠে আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালের পর থেকে বগুড়া-৬ আসন হাতছাড়া আওয়ামী লীগের। ১৯৯৬ সাল থেকে আসনটি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দখলে ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তিনি শপথ নেননি। পরে ২০১৯ সালের ২৪ জুনের উপনির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়।
নৌকা প্রতীক নিয়ে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান লড়ছেন। তবে তাঁর সঙ্গে নেই ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদ ও জাপা। জাসদ থেকে মশাল প্রতীকে লড়ছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক এবং লাঙ্গল প্রতীকে লড়ছেন জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন নুরুল। ওই নির্বাচনে এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিলেও নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে জাসদ-জাপা।
ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে লড়ছেন দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। ২০২১ সালের বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় আবদুল মান্নান আকন্দকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জামানত হারান। এবারের উপনির্বাচনে যাচাই-বাছাইয়ে আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে মাঠে ফেরেন আবদুল মান্নান আকন্দ।
আপেল প্রতীকে মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদার রহমান, একতারা প্রতীকের প্রার্থী আলোচিত হিরো আলম। কুড়াল প্রতীকে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার বাদল। তিনি সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। মাঠে আছেন গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (মাছ), বাংলাদেশ খেলাফতে আন্দোলনের প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বটগাছ), জাকের পার্টির প্রার্থী মো. ফয়সাল বিন শফিক (গোলাপ ফুল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিব হাসান (কুমির)।
এদিকে বগুড়া-৪ আসনে ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) সমর্থন দেওয়ায় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন) এবার মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তবে মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। তিনি লড়ছেন একতারা প্রতীক নিয়ে। কুড়াল প্রতীকে লড়ছেন বিএনপির সাবেক নেতা এবং নন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী, গোলাপ ফুল নিয়ে লড়ছেন জাকের পার্টির আবদুর রশিদ সরদার, ডাব প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজ উদ্দিন মণ্ডল এবং ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন। ১১২টি কেন্দ্রের ৭৭৭টি বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ভোট গ্রহণের জন্য ১১২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৭৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ৫৫৪ জন পোলিং কর্মকর্তা কাজ করছেন। ৭৯টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮৪ হাজার ৬৭৯ ভোট পান। দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে তাঁরা রাষ্ট্রের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে এসে প্রভাবমুক্ত পরিবেশে স্বচ্ছন্দে ভোট দিতে পারেন—এ জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ জন পুলিশ সদস্য, এপিবিএন, আনসার ভিডিপিসহ ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও বিজিবি সদস্যরা টহলে আছেন। আছে র্যাবের টহল দল। একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা যা করা দরকার, সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।