ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান। আজ শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর আগে সকালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন।
মাইনুল হাসান নিজে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সকালে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার জন্য ফোন দেয়। আজ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিয়েছি। দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দুই দিন আগে দেখা করে দোয়া চেয়েছি। আশা করি, আমি মনোনয়ন পাব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া গত ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান। পরদিন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৫ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ওই আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল।
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে আজ মাইনুল হাসান ছাড়াও আরও ১৫ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আনসারী, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ তানবির হোসেন, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী শফিউল্লাহ মিয়া।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় প্রতীক নিয়ে ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। গত ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ ডিসেম্বর দল তাঁকে বহিষ্কার করে। এরপর ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি) হয়ে তিনি নির্বাচনে জয়ী হন।
এদিকে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতা। মনোনয়নপ্রত্যাশী মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে (মাইনুল) কীভাবে মনোনয়নপত্র দিল, পার্টিই জানে। তবে মনোনয়নপত্র দিলেই যে তাঁকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তা নিশ্চিত নয়।’
রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, ‘আমরা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে বলে এসেছি। তাঁকে (মাইনুল) বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের যাকে খুশি মনোনয়ন দেন, আমরা মেনে নেব। আমরা আশ্বাসও পেয়েছি। এরপরও যদি দল তাঁকে দেয়, তবে আমরা সবাই মিলে একজনকে প্রার্থী দেব।’
মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন এমন একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত্তারের ছেলেকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হলে আমরা মেনে নেব না। আমরা সবাই মিলে একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করব।’