শুধু নামের মিলের কারণে জেল খাটছেন লিটন
ডাকাতির প্রস্তুতির মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল। বাবার নামও একই। কিন্তু মায়ের নাম, বয়স ও ঠিকানা ভিন্ন। তবে নামের মিল থাকার কারণে জেল খাটছেন আলমারি দোকানি মো. লিটন (৪০)। পুলিশের ভুলে তিনি বিনা দোষে নয় দিন ধরে কারা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি জানতে পেরে মামলার আসামি লিটন ও কারাভোগকারী লিটন একই ব্যক্তি কি না, তা তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার একটি ডাকাতির মামলায় ৯ ডিসেম্বর আলমারি রং করানোর কথা বলে লিটনকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করেছিল। সেই থেকে লিটন কারাগারে।
গ্রেপ্তার লিটনের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভায়েরখীল এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তিনি শুকলালহাট বাজারে রাব্বি মেটাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামের একটি আলমারির দোকানের মালিক। কিন্তু মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির বাড়ি ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজিপাড়া এলাকায়। দুজনের বাড়ির দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের বেশি। দুজনের বাবার নাম মো. এসহাক।
বাবাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে লিটনের ছেলে মো. নুর উদ্দিন (১৮)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৯ ডিসেম্বর থানা থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর বাবাকে ফোন দিয়ে আলমারি রং করার কথা বলে ডেকে নিয়ে যান। থানায় যাওয়ার পর প্রথমে তাঁর মুঠোফোন জব্দ করা হয়। আর জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাবাকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে তিনি থানায় যান।
নুর উদ্দিন বলেন, তাঁর বাবাকে কারাগারে নেওয়া পর আইনি লড়াইয়ের জন্য মামলার নথি তোলার পর জানতে পারেন মামলার আসামি লিটন ও তাঁর বাবা এক ব্যক্তি নন। গত মঙ্গলবার তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে প্রত্যয়নপত্র নেন। পরের দিন প্রত্যয়নপত্র আদালতে জমা দেন। গত বৃহস্পতিবার বিচারক বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
থানা সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১০ জুন রাতে উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিন প্রকৃত আসামি লিটনকেও (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন গ্রেপ্তার ছয়জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা করেন তৎকালীন এসআই মো. ইকবাল হোসেন। এরপর জামিনে এসে লিটন পলাতক। পরে আদালত লিটনকে এক বছরের সাজা দেন। লিটনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ৯ ডিসেম্বর বর্তমানে কারাগারে থাকা লিটনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মামলা নথিভুক্ত হওয়ার দিন প্রকৃত আসামি লিটনের বয়স দেওয়া হয়েছে ২০। সে হিসেবে বর্তমানে তাঁর বয়স হওয়ার কথা ২৮ বছর। তাঁর মায়ের নাম হাবা খাতুন ও বাড়ি বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মিয়াজিপাড়া গ্রামে। কিন্তু বর্তমানে কারাগারে থাকা লিটনের বয়স ৪০ বছর। মায়ের নাম ছায়েরা বেগম ও বাড়ি বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভায়েরখীল এলাকায়।
মিয়াজীপাড়া গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর গ্রামের লিটনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ডাকাতির মামলা রয়েছে বলে তিনি জানেন। এরপর জামিনে এসে তিনি বিদেশে চলে যান। বর্তমানে তিনি বিদেশে আছেন।
বাড়বকুণ্ড ইউপির চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজি বলেন, ডাকাতির মামলার আসামি লিটন তাঁর প্রতিবেশী। বিদেশ যাওয়ার আগে তাঁর স্বভাব ভালো ছিল না। ডাকাতদের সঙ্গে চলাফেরা ছিল লিটনের। বিয়ে করে তিনি বিদেশে চলে গেছেন।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিজের নাম ও বাবার নামর মিল থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে লিটনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তিনি জানতেন না। এমনকি গ্রেপ্তার লিটনের পরিবারও বিষয়টি তাঁকে জানায়নি। গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে গ্রেপ্তার লিটন ও আসামি লিটন একই ব্যক্তি কি না, যাচাইয়ের জন্য আদেশ আসার পর বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। এখন লিটনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা আদালতে প্রতিবেদন দেবেন। লিটনকে মুক্ত করা পর্যন্ত পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।