চীনের জলসীমায় নাবিক হত্যা মামলায় অগ্রগতি নেই, পরিবারের অসন্তোষ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদের ছেলে নাবিক আবদুর রহমান হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার হক অ্যান্ড সন্স এজেন্সির একটি ভাড়া করা সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী জাহাজ এমটি কনসার্টোর নাবিক হিসেবে কাজ করার সময় চীনের জলসীমায় ২০২২ সালের ১ জুন মারা যান আবদুর রহমান। এ জাহাজের ২৪ জন নাবিকের সবাই বাংলাদেশি ছিলেন। মৃত্যু সম্পর্কে জাহাজের কর্তৃপক্ষের অসংলগ্ন বক্তব্য, লাশের শরীরে যখমের চিহ্ন থাকায় বিমানবন্দর থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়। মামলা নম্বর ০৫/২০২২। আবদুর রহমানের পরিবার এ মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড মনে করে হত্যা মামলা দায়ের করতে চায়। কিন্তু পুলিশ প্রথমে হত্যা মামলা গ্রহণ করতে চায়নি। পরে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেয় পরিবার। আদালতের নির্দেশে ২০২৪ সালের ২৬ জুন ঢাকার বিমানবন্দর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
হামিদুর রশিদের দায়ের করা হত্যা মামলাটিতে আসামি করা হয়েছে ওই জাহাজের নাবিক মো. জহুরুল ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ, মো. ফয়সাল বিন আবদুল মান্নান, মো. তারিকুল ইসলাম ভুঁইয়া, মো. মোকরম হোসেন ও উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকার হক অ্যান্ড সন্স লিমিটেডকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিটিটিসিকে। হত্যার দুই বছর পর মামলা হলেও তদন্তকারী সংস্থার অসহযোগিতার কারণে তদন্ত এগোচ্ছে না। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না আসামিদের। মামলার তদন্তের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি তদন্তকারী সংস্থা সিটিটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন নিহত আবদুর রহমানের বড় ভাই হালিমুর রশিদ। তিনি নিজেও একটি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছেন। ফলে আবদুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জাহাজের ক্যাপ্টেন ও অন্যান্য নাবিকের অসংলগ্ন ও মিথ্যা কথা বুঝতে পেরেছেন বলে দাবি হালিমুর রশিদের।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১ জুন চীনের জলসীমায় হক অ্যান্ড সন্সের একটি জাহাজে মারা যান আবদুর রহমান। প্রায় ৪০ দিন পর তাঁর লাশ দেশে আসে। পরে ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু সিটিটিসি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে মামলা দায়েরের আট মাসেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, জাহাজটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হক অ্যান্ড সন্সের কর্মকর্তারা আবদুর রহমানের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি বিষয়টি মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
নিহত আবদুর রহমানের মা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। যারা হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। পাশাপাশি আমার ছেলেদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আমি এর অবসান চাই।’ আবদুর রহমানের স্ত্রী মাহমুদা নূরে নাহরীন বলেন, ‘জাহাজে থাকার সময় স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছিল আমার। তিনি বারবার বলছিলেন, জাহাজের ত্রুটি থাকার কথা বলায় কয়েকজন তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। ওই ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।’
তবে মামলার তদন্তে অসহযোগিতার কথা অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিটিটিসির উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন। তিনি দাবি করেন, মামলার এজাহারনামীয় পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজন উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিয়েছেন। বাকি দুজন দেশের বাইরে আছেন। তবে মামলার তদন্তকাজ চলছে। ঘটনাস্থল দেশের বাইরের জলসীমায় হওয়ায় কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।