মেয়ের ঈদের জামাকাপড় সামনে রেখে হাউমাউ করে কাঁদছেন মা

মেয়ের ঈদের পোশাক বের করে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকার দোহারের সুতারপাড়া ইউনিয়নের ঘাড়মৌড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

মায়ের কাছে বায়না ছিল ঢাকায় গিয়ে কেনাকাটা করে নতুন কাপড় পড়ে ঈদ করবে রাইসা। উৎসব রাঙাতে হাতে পড়েছিল মেহেদী। কিন্তু সেই আনন্দকে বিষাদে পরিণত করে সলিল সমাধি হলো প্রথম শ্রেণির ছাত্রী রাইসার। গতকাল বৃহস্পতিবার নদীতে গোসল করতে নেমে একই সঙ্গে তার খালাতো বোন সামিয়ারও মৃত্যু হয়েছে।

রাইসা (৮) দোহারের সুতারপাড়া ইউনিয়নের ঘাড়মৌড়া এলাকার মো. মুকসেদের মেয়ে। সামিয়া (৮) নারিশা পশ্চিমচর লঞ্চঘাট এলাকার সামসুল হক ব্যাপারীর মেয়ে। ঈদের ছুটিতে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে ঢাকার দোহার উপজেলার খালপাড় এলাকায় পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।

দুই খালাতো বোনকে আল আমিন বাজারের কাছে একই কবরস্থানে দাফন করা হয়। সন্তানদের হারিয়ে এ দুটি পরিবারে এবারের ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ঘাড়মৌড়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, রাইসার শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা শিল্পী আক্তার। মেয়ে রাইসা ও ভাগনি সামিয়ার স্মৃতি মনে করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। ঈদে মেয়ের জন্য কেনা জামাকাপড় সামনে রেখেই হাউমাউ করে কাঁদছেন। কোনো সান্ত্বনাই যেন তাঁকে শান্ত করতে পারছে না। স্বজনেরা পাশে বসেই শোকাহত মাকে জড়িয়ে বাক্হীন হয়ে পড়েছেন।

শিশু রাইসা এখন শুধুই ছবি
ছবি: পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া

ঈদের মাত্র কয়েক দিন আগে পরিবারের দুটি তাজা প্রাণ এভাবে যাবে তা কি জানত মা–বাবার মন।

রাইসার ইচ্ছা পূরণ করতে ফুপু শিল্পী বেগমকে সঙ্গে করে ঢাকা থেকে নতুন কাপড় কিনে এনেছিলেন তাঁর মা–বাবা। এসব কাপড় দেখিয়ে রাইসার ফুপু শিল্পী বেগম বলেন, ‘কে পরবে এ কাপড়? কে দেখবে আমার মায়ের সাজগোজ। আল্লাহ তুমি এভাবে আমার মাকে নিয়ে গেলে!’

আরও পড়ুন

রাইসার বাবা কৃষক মোকসেদ আলী নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন ঘরের মেঝেতে। মুখ থেকে যেন কোনো কথা বের হচ্ছে না। মনের অজান্তে দুচোখের কোণে জমানো অশ্রু ছেড়ে দিয়ে বারবার মেয়ের কথা মনে করে বুক চাপড়ে কান্না করছে। দাদি মাফুজা বেগম ও দাদা জনাব আলী রাইসার মা–বাবাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

একই দৃশ্য দেখা গেছে নারিশা পশ্চিমচর এলাকার সামিয়ার বাড়িতে। সন্তানহারা মা–বাবাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে সেখানে এসেছেন প্রতিবেশীরা। সামিয়ার বাবা সামসুল হক বলেন, ‘আমার মা নাই। আমার ঈদ নাই। সবকিছু কিনে আমার মা এভাবে ফাঁকি দিয়ে যাবে ভাবিনি। আল্লাহ যেন আমার মাকে জান্নাত দেয়।’