দৌলতদিয়া ঘাটে ঈদফেরত মানুষের ভিড়

যাত্রীদের ভিড়ে যানবাহনের তেমন ঠাঁই নেই বললেই চলে। দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ১৫ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে আজ শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা কর্মজীবী মানুষের ঢল নামে। এদিকে দুই দিন ধরে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নদী পাড়ি দিতে আসা গাড়ির চাপ বাড়ছে।

আজ সকাল ৯টার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কোথাও যানবাহনের লাইন নেই। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো সরাসরি ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কে যাচ্ছে। সেখান থেকে ভাগ ভাগ হয়ে যে ঘাটে ফেরি ভেড়ানো দেখছে, সে ঘাটেই চলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারলেও, মাঝেমধ্যে যাত্রীর ভিড়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগছে।

কয়েক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যবারের তুলনায় এবারের যাত্রা ছিল অনেকটা স্বস্তির। এর আগে কোনো ঈদে এমন স্বস্তির যাত্রা দেখেননি কেউ। এর আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায় দীর্ঘ যানজটে বসে থাকতে হয়েছে। এমনকি অনেক গাড়িকে এক-দুই দিন পর্যন্ত ঘাটেই যানজটে লাইনে বসে থাকতে হয়েছে। এতে আটকে থাকা মানুষসহ যানবাহনের চালক ও সহকারীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

এ ছাড়া দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটেও একইভাবে যাত্রীদের ভিড় পড়েছে। আজ সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীবোঝাই করে নদী পাড়ি দিতে দেখা যায়।

চুয়াডাঙ্গা থেকে পূর্বাশা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকায় ফিরছিলেন সিলেটের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুল ওহাব। দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এমন যাত্রা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। গত ঈদুল ফিতরের সময় দৌলতদিয়া ঘাটে ১০ ঘণ্টার মতো যানজটে আটকে ছিলাম। অথচ সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এবারের ঈদুল আজহায়।’

বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঘাটে পৌঁছানোর পর যাত্রীরা সুবিধাজনক ফেরিতে উঠছেন। দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ১৫ জুলাই
ছবি: প্রথম আলো

আবদুল ওহাব বলেন, ‘সিলেটে কর্মস্থলে আগামী রোববার যোগ দিতে হবে। ঘাটের পরিস্থিতি কী, চুয়াডাঙ্গা থেকে তো বুঝতে পারিনি। তাই সকাল সাতটার বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। সড়কের কোথাও কোনো বাধা বা যানজট ছাড়াই মাত্র তিন ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছেছি। ঘাটে পৌঁছে দেখি, পুরো সড়ক ফাঁকা। সরাসরি ফেরিতে গিয়ে উঠেছি। অথচ ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই ঘাটে বসে থেকে আমাদের কত দুর্দিন কেটেছে।’

যশোরের নড়াইল থেকে মোটরসাইকেলে করে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছান সাভার ইপিজেট এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিক রাসনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ভাইকে সঙ্গে করে মোটরসাইকেল ভাড়ায় ঘাটে এসে পৌঁছাই। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। এখন নির্বিঘ্নে ফেরিতে উঠতে পারছি। কাল শনিবার থেকে আমাদের কারখানা খোলা। তাই আজই সাভার পৌঁছাতে হবে। কোথাও তেমন কোনো সমস্যা ও হয়রানি ছাড়াই ঘাটে পৌঁছেছি।’ তবে ভাড়া বেশি নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেই ঢাকা যাচ্ছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘সাতসকালে রওনা করে সরাসরি ঘাটে এসে পৌঁছেছি। কোথাও কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। যে কারণে তেমন কোনো ভোগান্তিও হয়নি।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহনের চাপ কম থাকায় ফেরির সংখ্যাও কমানো হয়েছে। দুই দিন ধরে মধ্যরাতের পর থেকে পরদিন বিকেলের আগপর্যন্ত যানবাহনের চাপ কম থাকায় ফেরির সংখ্যা কমিয়ে ১০টি করা হয়। বিকেলে গাড়ির চাপ বাড়লে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবার ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ১৪-১৫টি করা হয়। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে ২১টি ফেরি সচল রাখা হয়েছে।