র‍্যাবের দাবি আন্দোলনে অস্ত্রধারী যুবলীগ কর্মী, পুলিশ বলছে জড়িত নন

র‍্যাবের হাতে আটক গাছ ব্যবসায়ী কাজী জাহিদুল আলমছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়াকে গুলি করে হত্যার মামলায় অন্যতম আসামি এইচ এম মিঠু নামের এক যুবলীগ কর্মী। হামলার সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ঘটনাস্থলে তাঁর অবস্থানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। আজ সোমবার র‍্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্দোলনে অস্ত্রধারী এই যুবলীগ কর্মী ও কিশোর গ্যাং নেতাকে আটক করা হয়েছে। তবে আটক ব্যক্তিকে থানায় সোপর্দ করা হলে যাচাই-বাছাই করে পুলিশ জানায়, র‍্যাবের হাতে আটক ব্যক্তি এইচ এম মিঠু নন। যাঁকে আটক করা হয়েছে, তিনি কাজী জাহিদুল আলম ওরফে মিটু, পেশায় গাছ ব্যবসায়ী। তাঁর নামে থানায়ও কোনো মামলা নেই।

র‍্যাবের হাতে আটক হওয়া কাজী জাহিদুল আলমের বাড়ি নগরের চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা এলাকায়। নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় একটি দোকানে গাছের ব্যবসা করেন তিনি।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) কাজী শরীফ উল আলমের সই করা একটি বিজ্ঞপ্তি আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যা মামলার আসামি ও কিশোর গ্যাং নেতা এইচ এম মিঠুকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাতে নগরের চান্দগাঁও কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে র‍্যাব আটক করেছে। গত ১৮ জুলাই নগরের মুরাদপুর এলাকায় আসামি ও তাঁর সহযোগীদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন হৃদয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় ২৩ জুলাই মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহত হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বন্ধু আজিজুল হক বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে এজাহারভুক্ত আসামি এইচ এম মিঠু।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যা মামলার আসামি এইচ এম মিঠু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১৪টি মামলা রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অস্ত্র হাতে যুবলীগকর্মী এইচ এম মিঠু। গত ১৮ জুলাই নগরের মুরাদপুর এলাকায়
ফাইল ছবি

আটকের পর কাজী জাহিদুল আলমকে র‍্যাব সদস্যরা আসামি এইচ এম মিঠু পরিচয়ে চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করেন। কিন্তু থানা-পুলিশ যাচাই-বাছাই করে দেখে, র‍্যাবের হাতে আটক আসামি অস্ত্রধারী এইচ এম মিঠু নন। র‍্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে পাঠানো আটক ব্যক্তির ছবি দেখে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক চান্দগাঁও থানায় ফোন করে আটক ব্যক্তি প্রকৃত আসামি কি না, জানতে চান। এ সময় থানা-পুলিশ স্বীকার করে, অস্ত্রধারী মিঠুর চেহারার সঙ্গে র‍্যাবের হাতে আটক আসামির ছবির মিল নেই।

জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাব আসামি হস্তান্তরের পর পুলিশ যাচাই-বাছাই করে দেখে নিশ্চিত হয়েছে, প্রকৃত অস্ত্রধারী এইচ এম মিঠু নন। র‍্যাব যে আসামি ধরেছে, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় আগের কোনো মামলা নেই। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। তাই তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হৃদয় চন্দ্র তরুয়া হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়নি। তবে গত মে মাসে এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অন্য একটি মামলায় কাজী জাহিদুল আলমকে সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়। আপাতত আদালতে পাঠানো হলেও পরে তদন্ত শেষে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে।

আসামি না হওয়ার পরও কেন তাঁকে অন্য একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, জানতে চাইলে ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘তাঁরা ধরে আমাদের কাছে দিয়েছেন। কী আর করা!’ পাশাপাশি প্রকৃত অস্ত্রধারী আসামি এইচ এম মিঠুকে ধরতে অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।

আদালত সূত্র জানায়, কাজী জাহিদুল আলমকে বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিতে তাঁর আইনজীবী মো. হারিছ আহমেদ আদালতকে বলেন, মামলার এজাহারে জাহিদুলের নাম নেই। তাঁর আগেরও কোনো মামলা নেই। পরে আদালত জাহিদুলের জামিন মঞ্জুর করেন।

জানতে চাইলে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) কাজী শরীফ উল আলম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তিনিই অস্ত্রধারী এইচ এম মিঠু।’ ঘটনার দিন অস্ত্রধারী মিঠুর যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তার সঙ্গে আটক ব্যক্তির চেহারার মিল না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার দিনের ছবিটি আমাকে দিন।’

জামিনে মুক্তির পর কাজী জাহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘র‍্যাব আমাকে ধরে নিয়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারিনি। বারবার বলার পরও তারা আমাকে অস্ত্রধারী বলে থানায় দিয়েছে। মিডিয়ায় আমার ছবিও দিয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত অস্ত্রধারীকে বাদ দিয়ে নিরীহ ব্যক্তিকে অস্ত্রধারী বলে আটকের পেছনে প্রকৃত আসামিকে বাঁচানোর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।